২০২৩ থেকে ২০৩১- এই সময় বৃত্তে চারদিনের টেস্ট চালু করতে চাইছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা আইসিসি। যা কিনা বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেরই অংশ হবে। আইসিসি আসলে আরও বেশি করে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চাইছে। ভারতীয় বোর্ড আবার চাইছে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের সংখ্যা বাড়াতে। তাছাড়া বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আরও বেশি করে উঠে আসছে। আর এসবের জন্য জায়গা ফাঁকা করতেই টেস্ট ক্রিকেটকে চারদিনের করার ভাবনা। তাছাড়া একটা টেস্ট ম্যাচ পাঁচদিন ধরে চলে। তার খরচও আছে।
চার দিনের টেস্ট অবশ্য নতুন কিছু নয়। এই বছরেই ইংল্যান্ড বনাম আয়ারল্যান্ডের মধ্যে চার দিনের টেস্ট হয়েছিল। তার আগে ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা আর জিম্বাবোয়ের মধ্যেও চার দিনের টেস্ট খেলা হয়েছিল। কিন্তু সব ক’টি টেস্ট খেলিয়ে দেশ পরস্পরের মধ্যে চার দিনের টেস্ট খেলছে, এ রকম ঘটনা ঘটলে সেটা অভূতপূর্বই হবে।
তবে আইসিসির এই পরিকল্পনাকে সবাই যে মেনে নেবে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। অস্ট্রেলিয়াতেই যেমন দুটো মতবাদ পাওয়া যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার কেভিন রবার্টস মনে করেন, চার দিনের টেস্ট ম্যাচের ব্যাপারটা ভেবে দেখাই যেতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের এই ব্যাপারটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। এই সপ্তাহে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। তবে শুধুমাত্র আবেগের বশে কোনও সিদ্ধান্ত নিলে হবে না। পরিসংখ্যান এবং তথ্য ঘেঁটে দেখতে হবে। যেমন আমাদের দেখতে হবে, গত পাঁচ-দশ বছরে টেস্ট ম্যাচ গড়ে কত দিন আর কত ওভার চলেছে। তবে একটা জিনিস পরিষ্কার করে বলতে চাই। আমরা আইসিসি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে তৈরি।’’
তবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান চারদিনের টেস্টের পক্ষে সওয়াল করলেও খোদ অজি অধিনায়ক টিম পেইন বিষয়টির বিরোধিতা করেছেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২৪৭ রানে বক্সিং ডে টেস্ট জেতার পর পেইনের বক্তব্য হল, গত অ্যাসেজে অস্ট্রেলিয়া জিততেই পারত না যদি টেস্ট ম্যাচগুলো পাঁচের বদলে চারদিনের হত। ‘‘যত দূর মনে পড়ছে অ্যাসেজের প্রত্যেকটা ম্যাচই পাঁচদিনে গড়িয়েছিল। সেখানে চারদিনের টেস্ট হলে অ্যাসেজে ফল পাওয়া সম্ভব হত কি?’’ প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন পেইন। এও বলেন, ‘‘টেস্ট ক্রিকেট এখানেই তো তফাতটা গড়ে দেয়। পাঁচদিন ধরে টানা খেলে যাওয়াটা খুব সহজ নয়। এতে মনের উপর চাপ পড়ে। চারদিনের প্রথম শ্রেণির ম্যাচের তুলনায় যা অনেকটাই বেশি। তাই আমার মতে টেস্ট ক্রিকেট পাঁচদিনেরই হওয়া উচিত। চারদিনের নয়।’’ এদিকে বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, গোটা বিষয়টা ভালভাবে দেখতে হবে। এত আগে এনিয়ে মন্তব্য করা যাবে না।
চার দিনের টেস্ট ম্যাচ হলে প্রতি দিন ৯০ ওভারের পরিবর্তে ৯৮ ওভার করে হবে বলে আপাতত ঠিক আছে। সে ক্ষেত্রে একটা গোটা দিন কম হলেও ওভার নষ্ট হবে মোটে ৫৮। কিন্তু পাশাপাশি একটা প্রশ্নও উঠছে। বলা হচ্ছে, এখন ৯০ ওভার শেষ করতেই বাড়তি আধ ঘণ্টা সময় দিতে হয় অনেক টেস্টেই। সে ক্ষেত্রে ৯৮ ওভার কি করে এক দিনে করা সম্ভব হবে? বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট দলে যদি পেসারদের সংখ্যা বেশি থাকে। চার দিনের টেস্ট হলে পিচ প্রস্তুতকারকদের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁদের এমন পিচ তৈরি করতে হবে যা চার দিনের মধ্যে ব্যাটসম্যান, পেসার এবং স্পিনারদের সাহায্য করবে।