দেশজুড়ে সংশোধিত নাগরিক আইন ও নাগরিকপঞ্জীর বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলির ব্যাপক প্রতিবাদ আন্দোলন চলছেই। এই পরিস্থিতিতে মোদী সরকারের কাছে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার সামিল হয়েছে এনডিএ শরিকদের উল্টো সুর গাওয়া। এনআরসি-সিএএ ইস্যুতে বিজেপির পাশে নেই প্রথমসারির গুরুত্বপূর্ণ একজন জোটসঙ্গীও। পরিস্থিতি এমন যে, মাত্র তিনটি একজন সাংসদ বিশিষ্ট এনডিএ জোটের পার্টি এখনও পর্যন্ত এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইন নিয়ে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেনি।
হ্যাঁ, মহারাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টি অফ ইন্ডিয়া, তামিলনাড়ুর পিএমকে, উত্তরপ্রদেশের আপনা দল- এই তিনটি আঞ্চলিক স্তরের দল ছাড়া এনডিএ জোটে থাকা তাবৎ দল জানিয়ে দিয়েছে শুধু এনআরসি নয়, সংসদের দুই কক্ষে সমর্থন করলেও, এখন আর তারা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনও সমর্থন করে না। নীতিশ কুমারের দল জানিয়ে দিয়েছে, বিহারের ভোটপ্রচারে এই ইস্যু উত্থাপন করা চলবে না। নীতীশ কুমারের আচরণ নিয়েও গেরুয়া শিবিরের অন্দরে শঙ্কা, বিহারের নির্বাচনে তিনি জোটে থাকবেন তো?
এরই মধ্যে আসাম গণ পরিষদ সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে। শিরোমণি অকালি দলের পর এবার রামবিলাস পাসোয়ানের দলও বলেছে, তারা এনআরসির পক্ষে নয়। বিজেপির জোটসঙ্গী নাগা পিপলস পার্টি তাদের একমাত্র সাংসদকে শোকজ করেছে কেন তিনি নাগরিক আইন পাশ হওয়ার সময় ওই বিলকে সমর্থন করেছেন? মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট, বোড়োল্যান্ড পিপলস ফ্রন্ট, সিকিম ক্রান্তিকারী মোর্চা, এরা সকলেকই সংসদে নাগরিকত্ব বিলে সমর্থন করার পর এখন দেশজুড়ে আন্দোলনের জেরে ১৮০ ডিগ্রি উল্টো অবস্থান নিয়ে ওই আইনেরই বিরোধিতায় নেমেছে।
প্রসঙ্গত, এনডিএ-র ভাঙন মূলত শুরু হয়েছিল মেহবুবা মুফতিকে দিয়ে। তারপর চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি। আর সম্প্রতি শিবসেনা ও ঝাড়খণ্ড নির্বাচনের প্রাক্কালে অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। বাকি আছে অকালি দল এবং নীতীশ কুমার। বিজেপি শীর্ষ নেতাদের সব থেকে চিন্তা বাড়িয়েছেন নীতিশই। কারণ বিহারের নির্বাচনকে সামনে রেখে নীতিশের আচরণ নিয়ে রীতিমতো শঙ্কিত বিজেপি। কারণ, তাঁর দলের সহ সভাপতি প্রশান্ত কিশোর প্রতিদিন বিজেপি তথা কেন্দ্রকে আক্রমণ করছেন। অথচ নীতীশ কোনও মন্তব্যই করছেন না। তা হলে কি প্রশান্ত কিশোরের সব বক্তব্যের পিছনেই সমর্থন রয়েছে তাঁর?
আসলে দেশে একের পর এক রাজ্য বিজেপির হাতছাড়া হচ্ছে। আর সেই সব বিজেপি বিরোধী দল অথবা জোটের সরকারও এনআরসির বিরুদ্ধে। সুতরাং দেশের রাজনৈতিক সমীকরণে বিজেপি যে একঘরে হয়ে গিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। আর এই পরিস্থিতিতে সিএএ-এনআরসি নিয়ে দেশজুড়ে চলা আন্দোলনের পাল্টা প্রচার শুরু করতে বাধ্য হল বিজেপি। গতকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ক্যাম্পেনের সূত্রপাত করে দেশবাসীর কাছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আবেদন করেন, প্রত্যেকেই যেন সিএএ সমর্থন করেন। এমনকী নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে ধর্মীয় গুরু সদগুরুর একটি বার্তা সংবলিত ভিডিও শেয়ার করে তা দেখতে অনুরোধ করেছেন তিনি।