দেশজুড়ে প্রতিবাদের আবহ। সিএএ বিরোধিতায় সোচ্চার দেশের বিরোধী সব রাজনৈতিক দল। পথে নেমে আন্দোলন করছেন পড়ুয়া থেকে সমাজের বিশিষ্টরা। এতেই উদ্বিগ্ন ভারতে কাজ করা বিদেশি কূটনীতিকরা। নয়া আইন নিয়ে বিক্ষোভের তীব্রতা বাড়লেও মোদী সরকার নীরবতা বজায় রেখেছে। এতেই বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্বেগ ক্রমশ আশঙ্কার পরিণত হচ্ছে। এই তালিকায় রয়েছে দিল্লির বেশ কয়েকটি বন্ধু রাষ্ট্রও।
ভারতে নিযুক্ত ১৬ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের সঙ্গে সিএএ বিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে কথা বলেছে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম। সেখানেই নয়া আইন ও প্রতিবাদ আন্দোলন প্রসঙ্গে উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন তাঁরা। ভারত সরকার এর আগে পুলওয়ামা, বালাকোট এয়ারস্ট্রাইক, জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার, অযোধ্যা রায় নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেছিল। কিন্তু, সিএএ বা তার প্রেক্ষিতে ঘটে চলা পরিস্থিতি নিয়ে কোনও কথা বলেনি। এমনকী দ্বিপাক্ষিক পার্য়ায়ের আলোচনাতেও বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। কেন এই নীরবতা? বিপদের আঁচ বুঝেই কী সরকারের এই অবস্থান? প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো।
ভারতে নিযুক্ত জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশের এক রাষ্ট্রদূতের কথায়, ‘৩৭০ থেকে অযোধ্যা ইস্যুকে কেন্দ্রীয় সরকার এদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে জানিয়েছিল। কিন্তু, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত থাকলেও ভারত সরকার এখনও একবারও সিএএ নিয়ে আমাদের জানানোর প্রয়োজন অনুভব করেনি। এই আইনে তিনটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নাম উল্লেখ রয়েছে-বিষয়টি তাই বেশ গুরুত্বপূর্ণ।’
জি-২০-পি-৫ গোষ্ঠীভুক্ত এক দেশের কূটনীতিকের কথায়, ‘ভারত পুরো বিষয়টিকেই অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলে বিবেচনা করতে পারে। মনে করতে পারে এর ফলে গ্বপাক্ষিক সম্পর্ক ব্যাহত হবে। তাই এই নীরবতা।’
ক্যাব আইনে পরিণত হওয়ার পরে বিক্ষোভকে দানা বাঁধে। যা মুসলিমদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ বলে মনে করছিলেন বিদেশি কূটনীতিকরা। কিন্তু আন্দোলনের তীব্রতা প্রমাণ করেছে দেশের বহু বাসিন্দাই এই আইনের বিরোধী। এতে সম্প্রদায়গত আন্দোলন নয়। এরপর জাপানি প্রধানমন্ত্রী আবে ও বাংলাদেশী বিদেশমন্ত্রীর ভারত সফর বাতিল করার বিষয়টি, তাদের এই উপলব্ধকে আরও পোক্ত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের নানা সভায় বলেছেন, সিএএ এদেশের নাগরিকদের জন্য নয়। মুসলমানদেরও ভয়ের কোনও কারন নেই। কিন্তু, এতে আস্বস্ত হতে পারছে না অন্যসব রাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ভারতে চলা সিএএ বিক্ষোভের কথা প্রকাশ পাচ্ছে। যা দেখে বিভিন্ন রাষ্ট্রের হেডকোয়ার্টার থেকে ভারতের সংশ্লিষ্ট হাইকমিশনের কাছে সম্পূর্ণ তথ্য জানানোর কথা বলা হচ্ছে। জানতে চাওয়া হচ্ছে যে-রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে মোদী সরকারের এই পদক্ষেপ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?
কিন্তু, কেন্দ্র নীরব থাকায় রাষ্ট্রদূতরা কিছু জানাতে পারছেন না বলে দাবি করলেন এক কূটনীতিবিদ। এমনকী ভারতের বন্ধু রাষ্ট্রের বাসিন্দাদের মধ্যেও মোদী সরকারের এই পদক্ষেপ ঘিরে নানা প্রশ্ন রয়েছে।
সিএএ নিয়ে সরকারের নীরবতা ভারতের অবস্থানকে ক্রমশ লঘু করছে বলে মত এদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন গোষ্ঠীভুক্ত এক দেশের কূটনীতিকদের। এর প্রভাব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে পড়তে পারে বলে সতর্ক করছেন তারা। ‘দেশের বৃহতর গণতন্ত্রে প্রতিবাদের স্থান নেই। যা ভাল বিজ্ঞাপন নয়’, মনে করেন জি-২০ গোষ্ঠাভুক্ত দেশের এক রাষ্ট্রদূত। উল্লেখ্য, নয়া আইনের প্রতিবাদ করায় সম্প্রতি এক জার্মান পড়ুয়া ও নরওয়ের বৃদ্ধাকে ভারত ছাড়তে হয়েছে।
ভারতে গত তিন বছর ধরে ভারতে কাজ করে চলা এক বিদেশি কূটনীতিকের কথায়, ‘মোদী সরকারের ফিল গুড বিষয়টি ক্রমশ বিলুপ্তপ্রায়।’
তবে, মালেশিয়া বা বাংলাদেশের সরকারিস্তর থেকে সিএএ নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে মুখ খোলা হলে প্রতিবাদ জানিয়েছে সাউথ ব্লক। নয়া আইনকে ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ’ বিষয় বলেই উল্লেখ করা হয়েছে।