সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বছরশেষে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল। যেখানে যা কিছু কর্মসূচি, তার মূল কেন্দ্রেই রয়েছে সিএএ বিরোধী সুর। নৈহাটি উৎসবের উদ্বোধনেও তার ব্যতিক্রম হল না। সেখানেও নয়া বিতর্কিত বিল নিয়ে উচ্চকণ্ঠে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন, ‘এ রাজ্যের ক্ষমতায় আছি আমরা। মনে রাখবেন, এখানে কোনও ডিটেনশন ক্যাম্প হবে না। মরে যাব, তবু ডিটেনশন ক্যাম্প করতে দেব না। অসমে ডিটেনশন ক্যাম্প হয়েছিল। কারণ, বিজেপি ছিল সরকারে।’
এদিনের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমেই উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। মনে করিয়ে দেন যে তিনি প্রথম যাদবপুর কেন্দ্রের সাংসদ হওয়ার পর সেখানকার উদ্বাস্তু বাসিন্দাদের আবেদন প্রাধান্য দিয়ে জমির দলিল তুলে দিয়েছিলেন নিঃশর্তে। কেন্দ্রের আগে রাজ্য সরকারই উদ্বাস্তুদের ‘নাগরিক’ বলে সম্মান দিয়েছিল। বাংলার সমস্ত উদ্বাস্তু কলোনিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এরপরই তিনি বক্তব্যের অভিমুখ সরাসরি নিয়ে যান এনআরসি, সিএএ-র দিকে। মমতা বলেন, ‘নতুন আইন কী বলছে, জেনে রাখুন। আপনি ছিলেন ভারতবাসী, হয়ে যাবেন বিদেশি। তারপর আবার আপনাকে নতুন করে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হবে। ওঁরা ওঁদের ইচ্ছেমত কাউকে নাগরিকত্ব দেবে, কাউকে দেবে না।’ তিনি এও বলেন, ‘রেশন কার্ড আছে, ভোটার কার্ড আছে। সবাই নাগরিক। ডেমোক্র্যাসি মানে সবাই নাগরিক, রাজা বলে কেউ নেই।’
নাম না করে বিজেপির উদ্দেশ্যে মমতা এও বলেন, ‘আমাকে আইন বেশি বুঝিয়ে লাভ নেই। আমি সাতবারের সাংসদ। বহু মন্ত্রক সামলেছি। আইন, সংবিধান সব আমিও জানি।যখন এনপিআর করবে বলে জানিয়েছিল, তখন ভেবেছিলাম সাধারণ সুমারি হবে। কিন্তু তারপর দেখলাম যে আইনটাই পালটে দিচ্ছে। তাহলে আমি কেন এনপিআর করব?’ নৈহাটি এলাকায় তৃণমূলের কী পরিস্থিতি ছিল, সেই অতীত দিনের কথাও এদিন স্মরণ করেন মমতা। আসলে উত্তর ২৪ পরগনার এই বারাকপুর শিল্পাঞ্চলে কয়েকটি পুরসভা সম্প্রতিই পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে রাজ্যের শাসকদল। যাতে থাবা বসিয়েছিল বিজেপি। তাই রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, এই পরিস্থিতিতে নৈহাটিতে সশরীরে গিয়ে মমতার এই উৎসবের উদ্বোধন অন্য অর্থেও বেশ ইঙ্গিতবাহী।