বড়দিন উদযাপন হচ্ছে বঙ্কিমচন্দ্রের আপন দেশে ‘বন্দেমাতরম’ ফিলহারমোনিক অর্কেস্ট্রাতে বাজিয়ে। এটা সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল। এটা কলকাতা, এখানে আব্রাহাম মজুমদারের তত্বাবধানে Christmas Grandioso বাজানো হয় বন্দেমাতরমের সুরে। গোটা হল স্তব্ধ হয়ে শোনে।
এটা কলকাতা, এখানে সব ধরনের মানুষ আসে, গির্জার বাইরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে, ধুপধাপ প্রণাম করে যে কোন মূর্তি দেখেই আর হাত বাইরে দেয় ‘অন্যজনের।’
এটা কলকাতা, এখানে বেকবাগানের মুসলমান চাচা নাকি সবচেয়ে ভালো ক্রিসমাস কেক বেক করে। গোটা শহর থেকে মানুষ আসে তার ওভেনে কেক বেক করাতে। যারা ডিম বাদে কেক বানাতে চায় তারা, যারা রাম বাদে কেক বেক করতে চায়, তারা ও।
এটা কলকাতা। এখানে খ্রিস্টান এক উৎসবে ইহুদি বেকারির সামনে হুমরে পড়ে লোকে, মুসলিম বেকারের বানানো সেই ব্রিটিশ জমানা থেকে সমাদৃত প্লাম কেক খেতে।
এখানে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের কালিমান সাহেবের দোকানে এক সাথে সাজানো থাকে বিফ ও বেকন, হ্যাম ও সসেজ। দোকানের সাহেবিয়ানা যে আজকাল সামলায় সে কিন্তু এক ঘোষ।
এটা কলকাতা। এখানে চীনে নাগরিকদের নিজস্ব কালী মন্দির আছে, এখানে মার্কিন দূতাবাসের ঠিকানা ভিয়েতনামের স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোধার নামে নামাঙ্কিত হো চি মিন সরণিতে। এখানে মানুষ খুব ভোরে উঠে পড়ে আকাশবাণীতে বীরেন ভদ্রের মহিষাসুরমর্দ্দিনী শুনবে বলে, কিন্তু আকাশবাণী সকাল শুরু করে মাঙ্গলিকী সানাই দিয়ে। সেটা বাজায় উস্তাদ বিসমিল্লাহ খাঁ।
এটা কলকাতা। এখানে শীত পোয়াতে লোকে ভিকটোরিয়া যায়, পেট পুজো করতে যায় আমিনিয়া! এদের ধর্ম ফর্ম দেখিয়ে ভাগ করতে আসবেন না। ফ্লুরিজের ব্রেকফাস্টের মতো জাস্ট গিলে নেমে, জেলুসিল খাবে, রামঢেকুর তুলবে, বোরোলিন মাখবে তারপর ফের মাংকি টুপি পড়ে শীত পোয়াতে বেরোবে।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত