নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসির প্রতিবাদে ফের রাস্তায় নেমে আন্দোলন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মঙ্গলবার বিধান সরণি থেকে বেলেঘাটা পর্যন্ত মিছিল করেন তৃণমূল সুপ্রিমোর। এদিন ফের বিজেপিকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘দেশভাগের চক্রান্ত করছে বিজেপি। দেশে শুধু বিজেপি থাকবে এটা হতে পারে না। আমরা হিন্দু-মুসলমান, ভাগাভাগি হতে দেব না। দেশ ভাগ হতে দেব না। বাংলা ভাগ হতে দেব না।’ প্রসঙ্গত বেশ কয়েকদিন ধরেই বাম নেতারা অভিযোগ করছেন নিউটাউন ও বানগাঁয় দুটি ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করছে রাজ্য সরকার। বেলেঘাটার সভা থেকে বামেদের সেই অভিযোগ নস্যাৎ করে দেন তৃণমূল নেত্রী। মমতা স্পষ্ট বলেন, ‘রাজ্যের কোথাও কোনও ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হচ্ছে না।’
একইসঙ্গে মতুয়াদের নাগরিকত্ব নিয়ে বিজেপির রাজনীতিকে ধিক্কার জানান তৃণমূল সুপ্রিমো। কলকাতার সভা থেকে জে পি নাড্ডার অভিযোগ, ‘সিএএ-র ফলে মতুয়ারা নাগরিকত্ব পাবেন। মমতা ব্যানার্জি বাধা দিচ্ছেন। এবার সেই প্রসঙ্গকেই পাল্টা বিজেপিকে বিঁধলেন মমতা। এদিন তিনি বলেন, ‘মতুয়া নামটাই মানুষ জেনেছে মমতা ব্যানার্জির জন্য। মতুয়াদের উন্নয়ন করেছে তৃণমূল সরকার। কেন মতুয়াদের অসম্মান করছেন। কেন হিন্দুদের অসম্মান করছেন। মতুয়ারা এদেশের নাগরিক, কেন তাঁদের লাইনে দাঁড় করাবেন?’ এদিনও স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে মমতার কটাক্ষ, নাগরিকত্বে প্যান কার্ড চলবে না, আধার কার্ড চলবে না, তাহলে কী বিজেপির দাঙ্গা মাদুলি চলবে? উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি নিয়েও সরব মমতা। কত জন মারা গেছেন সেখানে? আমি প্রতিনিধি পাঠালাম, এয়ারপোর্ট থেকে নামতেই দিল না। আর এখানে দিল্লি থেকে এসে মিছিল করে আমাকে গালাগাল দিয়ে যাচ্ছে। এক সেকেন্ডে মিছিল আটকে দিতে পারতাম আমি তা করিনি।
এদিন বিধান সরণিতে মিছিল শুরুর আগে মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির মুখ থুবড়ে পড়া নিয়ে সরব হন মমতা। তিনি বলেন, যোগ্য জবাব মানুষ দিতে শুরু করেছে। ঝাড়খণ্ডের মানুষ বিজেপিকে বুঝিয়ে দিয়েছে। মহারাষ্ট্রে হেরেছেন, ঝাড়খণ্ডেও হেরেছেন। অহংকার ছাড়ুন। ঔদ্ধত্য ছাড়ুন। বিজেপিকে কটাক্ষ মমতার। প্রসঙ্গত, বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর জেএমএম-কংগ্রেস-আরজেডি জোটকে ট্যুইট করে অভিনন্দন জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের সভা থেকে মমতার সাফ বার্তা, দেশ ভাগ হতে দেব না। বাংলা ভাগ হতে দেব না। এনআরসি-সিএএ মানছি না মানব না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন সারা দেশে বহু মানুষ এনআরসি-সিএএ-র প্রতিবাদে আন্দোলন করছেন। সব ধর্ম, জাতির মানুষ এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। সব মানুষের অধিকার রক্ষার আন্দোলন এটা। একইসঙ্গে তাঁর সতর্কবার্তা বিজেপির চালাকিতে কেউ পা দেবেন না। বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি করে। দিল্লির রামলীলা ময়দান থেকে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, এনআরিস নিয়ে ২০১৪ সালের পর থেকে তাঁর দলে আলোচনা হয়নি। এরপরই বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনায় সরব হন। সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বার বার বলেছেন এনআরসি লাগু হবেই। এবার সেই প্রসঙ্গও মঙ্গলবার উত্থাপন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন এনআরসি হবেই, আর প্রধানমন্ত্রী বলছেন আমরা তো একথা বলিনি। আপনারা যা বলেছেন সবাই জানে। সবাই বুঝতে পারছে কটাক্ষ মমতার। এদিনও নিয়মমাফিক নাগরিকত্ব নিয়ে উপস্থিত সকলকে শপথবাক্য পাঠ করান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই সিএএ-এনআরসি বিরোধী স্লোগানে মানুষকে নিয়ে সোচ্চার হন তৃণমূলনেত্রী। ফের একবার স্বমেজাজেই সদর্পে মমতার ঘোষণা, এনআরসি হবে না। সিএএ হবে না।