২০১৪ সাল থেকে এনআরসি নিয়ে সরকারের মধ্যে কোনও আলোচনাই হয়নি বলে রবিবার দিল্লিতে দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এনআরসি এবং নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে দেশ যখন জ্বলছে, তখন মোদীর এই দাবি ঘিরে বিভ্রান্তি তুঙ্গে উঠল। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে তাবড় নেতা, মন্ত্রীরা যখন বুক বাজিয়ে সমানে বলে চলেছেন, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগেই দেশজুড়ে এনআরসি হবেই, তখন মোদী কেমন করে অন্য কথা বলছেন? বিরোধীদের আরও প্রশ্ন, তা হলে কে সত্যি কথা বলছেন, মোদী না অমিত শাহ?
রবিবার দিল্লির রামলীলা ময়দানের জনসভা থেকে মোদী ঘোষণা করেন, ২০১৪ সাল থেকে এনআরসি নিয়ে সরকারের মধ্যে কোনও আলোচনাই হয়নি। প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, বিরোধীরা মিথ্যাচার করছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো কেবল অসমে এনআরসি করতে হয়েছে। মোদী এও বলেন, দেশের কোনও মুসলমান ধর্মের মানুষকে ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হচ্ছে না। দেশে কোনও ডিটেনশন সেন্টারই নেই। তাঁর অভিযোগ, দেশ ধ্বংস করার উদ্দেশে বিরোধীরা এই মিথ্যা ছড়াচ্ছেন। এনআরসি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই নয়া দাবিতে স্তম্ভিত বিরোধীরা। দেশে ডিটেনশন সেন্টার নেই বলে মোদীর দাবিকেও তাঁরা নস্যাৎ করে দিয়ে বলছেন, এ তো ডাহা মিথ্যে কথা।
কিছুদিন আগে রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে সারা দেশেই এনআরসি হচ্ছে। এবং অসমে দ্বিতীয়বারের জন্য এনআরসি করা হবে। তাঁর কথায়, বুঝে নিন, দেশজুড়ে এনআরসি আসতে চলেছে। এরপর ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনী সভা থেকে কিংবা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক জনসভায় একাধিকবার এনআরসি নিয়ে সুর চড়িয়েছেন তিনি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ থেকে বিজেপির কার্যনিবাহী সম্পাদক জে পি নাড্ডাও জানান, দেশজুড়ে এনআরসি হচ্ছেই। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যে নতুন করে বিভ্রান্তি ছড়াল বলে অভিযোগ বিরোধীদের। কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলির মোদীর এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করছে। কংগ্রেসের অফিশিয়াল ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে লেখা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কি মনে করেন ভারতীয়রা গুগল সার্চও করতে পারেন না? তাঁর মিথ্যে লোকে ধরতে পারবে না? এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রীকে।
রামলীলা ময়দান থেকে মোদীর এনআরসি নিয়ে নয়া দাবি ঘোষণার পর ট্যুইটারে মমতা লেখেন, জনসমক্ষে আমি এবং আপনি যা যা বলেছি, তা মানুষই বিচার করবে। এনআরসি বরং প্রধানমন্ত্রীই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উলটো কথা বলছেন। তৃণমূল নেত্রী প্রশ্ন তোলেন, তবে কারা ভারতের মৌলিক ধারনা ধ্বংস করছে? তাঁর দাবি, দেশের মানুষই যথাযথভাবে বিচার করবেন কে ঠিক এবং কে ভুল। এরপরে নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি-র বিরোধিতা করে মমতা ট্যুইটে লেখেন, #আই রিজেক্ট সিএএ#আই রিজেক্ট এনআরসি।