‘ঝাড়’ মানে ঝোপ। আর ‘খন্ড’ মানে ভূমি। ঝোপে ঝাড়ে ধাক্কা খেয়ে ও বিজেপি খুব বেশি সুবিধা করতে পারছে না, প্রমাণিত হইলো।
ভারতের প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের ৪০% ঝাড়খন্ডে। কী অদ্ভুত, এই রাজ্যেই ৪০% মানুষ আবার দারিদ্র্য সীমার নিচে। শাল পিয়ালের বন, লাল মাটির রাস্তা ধরে এরকমই দারিদ্র্য সীমার নিচে অবস্থিত একটি আদিবাসী গ্রাম। গ্রামে ৪০টা পরিবার থাকে। ট্রানজিস্টার আর জিও-র সিম দুটোই রাষ্ট্র দিয়েছে সহজে। কিন্তু চাল আনতে আজ ও পান্তা ফুরোয়। ঠাকুরদার সময় গ্রাম আরো গভীরে ছিল শোনা যায়, কিন্তু সরকার সব অরণ্য অঞ্চল বেচে দিচ্ছে বেদান্ত সংস্থাকে। একরাতে নাকি গোটা গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঠাকুরদাদের উচ্ছেদ করতে। যার যা হাতের কাছে ছিল নিয়ে চলে এসেছিল৷ ৫০ বছর লেগেছে এটা বিশ্বাস করতে যে ওরা ভারত বলে এক দেশের নাগরিক। রাঁচির থেকে ও বহু দূরে বাবুরা বসে দিল্লি বলে কোন এক অচিন দেশে। আপনি একদিন সকালে এই অরণ্য অঞ্চলে এসে এদের বাপ ঠাকুরদার কাগজ দেখতে চাইছেন? মামদোবাজি?
ছোটা নাগপুর এলাকাতে খ্রিষ্ট পূর্ব ৫০০০ বছর আগে ও গ্রামীণ সভ্যতা ছিল। রাজা ছিল, পাথরের উপর ভাস্কর্য ছিল, শিকারের প্রযুক্তি ছিল, পাথর কেটে বানানো থালা বাটি ছিল, আগুন ছিল। আপনি এদের স্রেফ অযোধ্যার রামের গল্প বলছেন? ওদের গল্পগুলো কোনদিন শুনেছেন? মগধের গল্প? মৌর্য, গুপ্ত, পালা, নাগ বংশীদের গল্প? ভবিশ্য পুরাণ শুনেছেন? ইন্দ্র উড়ন্ত হাতিকে নিয়ে মহুয়া বনে নেমেছিল জানেন?
আপনারা হিন্দিকে রাষ্ট্র ভাষা বলেন। গলা টিপে মেরে দেন এর বাইরে যা কিছু ছিল। জানেন ঝাড়খন্ডে ঠিক কতোগুলো ভাষায় মানুষ কথা বলে?খোরঠা, সাঁওতালী, বাংলা, সাদরি-নাগপুরী, উর্দু, মগহী, হো, মুণ্ডারি, ওরাওঁ, ভোজপুরী, ওড়িয়া, পঞ্চ পরগণিয়া নাম শুনেছেন? এগুলো ও ভারতবর্ষের অংশ। মানতে শিখুন।
আপনার বর্ণপরিচয় মতে ‘স’ এ সাভারকর। ঝাড়খণ্ড এ ‘স’ উচ্চারণ করলেই লোকে বোঝে সিধু, কানু, বিরসা মুন্ডা। গুরু গোলওয়ালকর শুনেছেন কিন্তু গুরু কলিয়ান হরামকে চেনেন? এসব তো জানতে হবে কাকা! কতদিন আর ‘দেশ মে জওয়ান মর রহে হে’ বলে বাঁচবেন। এরা কিন্তু ওসব মরতে ভয় পায়নি, তীর-ধনুকের কসম।
আপনার একবগগা, একরঙা, এক ভাষা, এক ধর্মের ভারতের বাইরে আছে আসল ভারতবর্ষ, ঝাড়খন্ডের মতো বৈচিত্র্যময়, বিরাট, প্রাচীন। সম্মান করতে শিখুন সাহেব। দেশটা উত্তর প্রদেশ আর গুজরাট না। এর বাইরেই সেই গানের বিবরণ যার জন্য আপনাকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়তে হয় সিনেমা হলে ও।
সম্মান করতে শিখুন ভাইয়ে ভাইয়ে এক থালায় বসে মহুয়া আর গরুর ঝাল খাওয়ার বাস্তবটা। আদিবাসী আর মুসলমানের দোস্তিটা। ওটাই বাস্তব, ‘জয় শ্রীরাম’ বলিয়ে সংখ্যালঘুকে পিটিয়ে খুনটা দুঃস্বপ্ন।
সাহেব আপনার ‘দেশ’ আর ‘সংবিধান’ এর ধারণার চেয়ে অনেক বৃহৎ এই ভূখন্ড। একে অপরের সাথে লড়িয়ে খন্ড খন্ড করার চেষ্টা করছেন আপনি। এই ছোট্ট রাজ্যটি স্রেফ আয়না তুলে ধরলো। এ দেশে হিন্দুরা ইঁদুর, শুয়োর, গরু, মহুয়া, হাড়িয়া ও খায় আর হিন্দু মানেই সে বিজেপিকে ভোট দেয় না।
মানতে শিখুন! সম্মান করতে শিখুন!
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত