এ যেন উলট-পুরাণ। তিনি প্রধানমন্ত্রী। কীভাবে মিষ্টি মিষ্টি কথায় উপস্থিত শ্রোতাদের মন ভোলাতে হয়, তা তাঁর নখদর্পণে। দেশবাসী বরাবরই লাইভ টেলিকাস্টে দেখে এসেছে, তাঁর ভাষণ মানেই হাততালিতে ফেটে পড়ে সভাস্থল। কিছু সময় পরই ‘মোদী’ ‘মোদী’ গর্জনে কেঁপে ওঠে ময়দান। তা সে গুজরাত হোক কিংবা ঝাড়খণ্ড বা বারাণসী। আবার বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠকই হোক কিংবা হাইভোল্টেজ নির্বাচনী প্রচার। তিনিও প্রায় প্রতিটি বাক্যেই উচ্ছ্বসিত করতালি, সরব গর্জনে সাধুবাদ এবং বন্দনার স্লোগানধ্বনি শুনেই অভ্যস্ত। কিন্তু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর এই চেনা দৃশ্যে ব্যতিক্রম ঘটল শুক্রবার। আর তার ফলে তাল কাটল মোদীর বক্তৃতায়। বণিকসভায় বক্তৃতা চলাকালীন হাততালির পরিমাণ কম হওয়ায় বক্তব্য মাঝপথে থামিয়ে দৃশ্যত বিরক্ত মোদী বলেই দিলেন, ‘হাততালিতে দম কোথায়। আপনারা মনে হয় আমার কথা ঠিক করে শুনছেন না।’
শুক্রবার দেশের অন্যতম বৃহৎ বণিকসভা অ্যাসোচেমের অ্যাসোচেমের বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখেন মোদী। দিল্লীর বিজ্ঞান ভবনে মোদীর সেই বক্তৃতার দিকে নজর ছিল গোটা দেশের শিল্প মহলের। অর্থনীতিকে বেহাল দশা থেকে সঠিক দশায় ফেরাতে প্রধানমন্ত্রী কী বার্তা দেন, সেদিকেই তাকিয়ে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। মোদি এলেন, স্বীকার করলেন অর্থনীতিতে ওঠানামা থাকে। তবে, বর্তমান দুরবস্থা দূর করার কোনও ওষুধ তিনি দিলেন না। উলটে জোর গলায় দাবি করলেন, অর্থনীতি সঠিক দিশায় এগোচ্ছে। দ্রুত আমরা ৫ ট্রিলিয়নের অর্থনীতিতে পরিণত হব। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ‘পাঁচ-ছয় বছর আগে দেশের অর্থনীতি রীতিমতো বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। আমরা সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে বর্তমানে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে পেরেছি।’ তবে তাঁর এসব কথাতে মন গলেনি উপস্থিত ব্যবসায়ীদের। সেভাবে হাততালিও পড়ছিল না প্রধানমন্ত্রীর কথাতে।
ফলে নিজের বক্তৃতায় মোদী যখন একের পর এক তথ্য তুলে ধরে সরকারের সাফল্য প্রচার করছিলেন, তখন উপস্থিত শিল্পমহলের নিস্পৃহ এবং দুর্বল প্রতিক্রিয়া তাঁর ভালো লাগেনি। যে কারণে শিল্পমহলের সম্মিলিত মঞ্চ দেশের প্রেস্টিজিয়াস বণিকসভা অ্যাসোচেমের সভায় দফায় দফায় তিনি বললেন, ‘কী হল, হাততালির শব্দ এত কম কেন? আমি তো আর একটু বেশি হাততালি আশা করেছিলাম।’ একটা সময় রীতিমতো মৃদু ক্ষোভের সঙ্গেই অসন্তুষ্ট মোদী বলে বসেন, ‘আপনারা মনে হয় এখনও অতীতের তথ্য পরিসংখ্যান মনে রেখে দিয়েছেন। তাই ঠিক বুঝতে পারছেন না আমি কী বলছি। ভালো করে মন দিয়ে শুনলে আরও জোরে হাততালি দেবেন।’ এরপর অবশ্য করতালির অভাব আর অনুভূত হয়নি মোদীর। কারণ একপ্রকার বাধ্য হয়েই হাততালি দিতে শুরু করেন শিল্পপতিরা।