দেশজুড়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে রাজনীতিক থেকে সাধারণ মানুষ। দিল্লী থেকে বেঙ্গালুরু, লক্ষৌ থেকে কলকাতা, মুম্বই থেকে পাটনা, চেন্নাই থেকে আমেদাবাদ- দেশের বহু জায়গায় ছাত্র, সাধারণ মানুষ ও বুদ্ধিজীবী মহল গর্জে উঠল নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে। আর নজিরবিহীন ভাবে সেই প্রতিবাদ দমন করল নানা রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন, যার মধ্যে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম কলকাতা তথা বাংলা। কারণ রাজ্যের শাসকদল তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আইনের বিরোধিতা করে মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। আর যার রেশ ইতোমধ্যে পড়েছে সারা রাজ্য তথা দেশে। আর সেই আন্দোলনের ঝাঁজ আরও বৃদ্ধি পেতে চলেছে আগামী সোমবার থেকে।
এদিন তৃণমূল ভবনে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে আগামী দিনে তৃণমূলের ভূমিকা ও আন্দোলনের গতি কোন পথে অগ্রসর হবে তা নিয়ে বৈঠক শেষে ফের একবার নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর দল বিজেপিকে তুলোধনা করলেন তৃণমূল নেত্রী। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সিএএ-এর প্রতিবাদে আগামী সোমবার ২৪ ডিসেম্বর থেকে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ‘আমরা কারা, নাগরিক’, এই স্লোগানকে সামনে রেখে নাগরিকত্ব সংশোধিনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের স্বর আরও জোরালো করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আর তাই আগামী ২৪ ডিসেম্বর কলকাতায় স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ির সামনে থেকে অর্থাৎ সিমলা স্ট্রিট থেকে বেলেঘাটায় গান্ধী ভবন পর্যন্ত মিছিল করবে তৃণমূল । ২৬ ডিসেম্বর দমদম, কামারহাটি এলাকায় মিছিল করবে তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস। ২৭ জিসেম্বর সিঙ্গুর থেকে তারকেশ্বর পর্যন্ত হবে প্রতিবাদ মিছিল। ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত সব বিধানসভা কেন্দ্রে ধর্ণা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে মমতার দল। এবং ১ জানুয়ারি তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিন, এবার নাগরিকদের উৎসর্গ করে ‘নাগরিক অধিকার দিবস’ পালন করবে তৃণমূল বলে এদিন ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এরপরই এদিন ফের একবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ ও তাঁদের দল বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেন মমতা। বলেন, ‘পেশীশক্তি না দেখিয়ে গণতন্ত্রের কাছে মাথা নত করতে হয়। শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহার করুন।’ তৃণমূল নেত্রী প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করে বলেন, ‘জেদ ছেড়ে দায়িত্ব নিন। আপনি বিজেপির প্রধানমন্ত্রী নন, দেশের প্রধানমন্ত্রী।’ এরপরই তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘আমরা জানি কি করা উচিৎ, কি করা উচিৎ নয়। তৃণমূল বন্ধ, অবরোধ সমর্থন করে না। তাই জনজীবন স্বাভাবিক রেখে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবে তৃণমূল।’ এরপরই এদিন বিজেপি নেতারাদের পুলিশের গুলি চালানোকে সমর্থন করায় তীব্র সমালোচনা করেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি বলেন, ‘১৯৮০ সালে যে দলের জন্ম, তাদের থেকে দেশাত্মবোধ শিখব না। আমি উদ্বাস্তু আন্দোলন দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছি।’