২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সংবাদ মাধ্যমের একটা বড় অংশকে নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ উঠেছে বারবার। আদতে সেই অভিযোগ যে খাঁটি, তাতে যে একটুও ভেজাল নেই, তা কার্যত নিজের বক্তব্যেই এবার স্পষ্ট করে দিলেন ভারতরত্ন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্ট বললেন, ‘সংবাদ মাধ্যম আর এখন সঠিক অবস্থায় নেই। পরিকল্পনামাফিক পক্ষপাতদুষ্ট অ্যাজেন্ডার জন্য কিছু স্বার্থপর মানুষ এই ধরনের কাজ করছেন।’ এই পদ্ধতি বদল হয়ে যাতে সাদাকে সাদা এবং কালোকে বলার ক্ষমতা মিডিয়া ফের পায়, সেই আহ্বানই জানিয়েছেন তিনি।
কোনও খবর যদি কেন্দ্রীর সরকারের বিরুদ্ধে হয়, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এখন ‘দালাল মিডিয়া’ কথাটা ব্যবহার করে থাকেন নেটিজেনরা। যেন কেন্দ্রের তাবেদারি করলেই তা স্বচ্ছ্ব সাংবাদিকতা। প্রশ্ন তুললে, বা বিরুদ্ধ সওয়াল করলেই তা অন্য রূপ নিয়ে নেয়। কিন্তু প্রণববাবুর কথাতেই কার্যত এদিন স্পষ্ট হয়ে যায়, সরকারের তাবেদারি না করাটাই আসল সাহসী সাংবাদিকতার পরিচয়। বুধবার এডিটর্স গিল্ড অব ইন্ডিয়ার তরফে আয়োজিত বার্ষিক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমে সব কিছুই আর ভাল নেই। কেউ কেউ একপেশে, পক্ষপাতদুষ্ট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কারও বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে। যা সাংবাদিকতার চরিত্রের সঙ্গেই যায় না। ব্যক্তিগত ভাবে কেউ যাই বিশ্বাস করুক না কেন, যে মতাদর্শে তিনি বিশ্বাস করুন না কেন, সাংবাদিকদের সরকারি আমলাদের মতো হওয়া উচিত। খবরের রং বিচার করবে না।’ অধিকাংশ সংবাদপত্র রাষ্ট্রের মুখপত্র হয়ে উঠেছে বলেও এদিন তোপ দাগেন প্রণব।
খবর এবং মতামত যে সম্পূর্ণ ভিন্ন, এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রণব। তিনি বলেন, খবরের নামে এখন মতামত এবং রায় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে জনগণের ওপর। বাস্তব এবং মতামত চাপিয়ে দেওয়ার জেরে আসল খবরটা ধোঁয়াশায় রয়ে যাচ্ছে। প্রণবের কথায়, ‘সংবাদমাধ্যমের কখনওই আপস করা উচিত নয়। শুধু সমালোচনা করার জন্যই সমালোচনা করা যেমন ঠিক নয়, তেমনই ইতিবাচক দিক তুলে ধরতে গিয়ে সরকারের মুখপত্র হয়ে ওঠাও ঠিক নয়।’
ইদানীং বিভিন্ন চ্যানেলে হওয়া ‘পেইড নিউজ’ নিয়েও নিজের অসন্তোষের কথা প্রকাশ করেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। বলেন, ‘আজকাল অনেক প্রকাশকই পেইড নিউজ বা এ ধরনের কৌশল নিয়ে চলছে। এই অনিয়ম কোনও ভাবেই চলতে পারে না।’ এই বিষয়ে আত্মসমালোচনা করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। প্রণবের পরামর্শ, মিডিয়ার উচিত দেশের অন্তরাত্মার রক্ষক হয়ে ওঠা।