লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই বিজেপি-বিরোধী যে কোনও কর্মসূচিতে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন কেন্দ্রীয় চরিত্র। মিছিল, সভাতে ভিড়ের মাঝে নেতৃত্বের লাগাম নিজের হাতে নেওয়ার দক্ষতা তাঁর করায়ত্ত। জনস্বার্থ-বিরোধী যে কোনও প্রকল্পের বিরোধিতায় তাঁর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। এবারও তেমনই, সিএএ- এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে সসম্মানে উত্তীর্ণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনটাই বলছেন, দেশের নেটিজেনরা। চলচ্চিত্র থেকে শিক্ষা, সাহিত্য- বিবিধ ক্ষেত্রের মানুষের মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা। এদেশে সিএএ-বিরোধিতা নিয়ে দ্য নিউ ইয়র্ক পোস্টের খবরেও সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিছিলই।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদে পেশ হতেই বিরোধিতা করেছিল প্রায় সব বিরোধী দলই। তবে সেই বিরোধিতার ঝাঁঝ ও উত্তাপকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। চলতি সপ্তাহের ৩ দিন শহরের বিভিন্ন অংশ থেকে সিএএ -এনআরসি বিরোধী মিছিলে হাঁটছেন তিনি। মিছিল শেষে সভা থেকে একদিকে যেমন হুঙ্কার ছুঁড়ছেন, ‘বাংলা ভাগ হতে দেব না। আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে সিএএ করতে হবে।’ আবার তেমনই ‘বিজেপি-র টাকা খেয়ে রাজ্যে আগুন জ্বালাবেন না’ বার্তায় চোখে আঙুল দিয়ে রাজ্যে হিংসা ছড়ানোর চেষ্টাকেও চিহ্নিত করেছেন। ‘আইন ভাঙলে’ যে ‘কঠোর শাস্তি’, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাহুল গান্ধী থেকে অরবিন্দ কেজরিওয়াল- জাতীয় রাজনীতির তাবড় মুখদের মুখে সিএএ-বিরোধী সুর শোনা গেলেও, রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখা যায়নি। জামিয়া মিলিয়ায় পড়ুয়াদের উপর দিল্লী পুলিশের লাঠিচার্জের পর সাংবাদিক বৈঠকে তার নিন্দা করলেও প্রতিবাদের আওয়াজকে তীব্রতর করতে ব্যর্থ বাম-কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতারাও। এমনই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। যার প্রতিফলন সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেখা গিয়েছে।
সিএএ-বিরোধিতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকার প্রশংসা করে টুইট করেছেন বলিউড পরিচালক-প্রযোজক মহেশ ভাট। নাগরিকত্ব আইন ঘিরে আতঙ্কের মধ্যেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থানকে ‘মা সারদা’র বাণীর সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। মহেশ ভাট্টের কথায়, ‘মা সারদা যা বলেছিলেন, মমতাজি তা করে দেখাচ্ছেন: ভাঙতে পারে সবাই, গড়তে পারে ক’জন।’
নাগরিক আইনের বিরোধিতায় সোমবার ময়দানের আম্বেদকর মূর্তি থেকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত মিছিল করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সেখানে জমায়েতে কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘কী করবে, আমার সরকার ফেলবে? আমাকেও ফেলে দাও। এখানে এনআরসি-ক্যাব চালু করতে হলে আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে করতে হবে।’ এদিনই তিনি মনে করিয়ে দেন, নোটবন্দী-এনআরসি-র বিরুদ্ধেও তিনিই প্রথম মুখ খুলেছিলেন এবং তখনও একাই ছিলেন। বলেন, ‘আজ দিল্লী, পাঞ্জাব, ছত্তিশগড়, কেরালার মুখ্যমন্ত্রীরাও বলছেন সিএএ মানবেন না।’
সিএএ নিয়ে বিরোধিতাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন, তা যে আপাতত অন্য কারোর পক্ষে সম্ভবপর নয়, প্রকাশ্যেই তা মানছেন সাহিত্যিক থেকে জাতীয় স্তরের সাংবাদিকেরা।
রাজপথের রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফল্য বহু পরিবর্তন এনেছে। সিএএ-এনআরসি-কে হাতিয়ার করে মমতাকে ফের রাস্তায় নেমে আসার সুযোগ দেওয়া কি কলকাতার মুরলীধর সেন লেন থেকে দিল্লীর দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের জন্য ভুলে পরিণত হবে? প্রশ্ন ওয়াকিবহাল মহলের।