উত্তরপ্রদেশ, দিল্লী, তেলেঙ্গানা-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে যখন শিকেয় উঠেছে নারী সুরক্ষা, তখন নারীদের জন্য অনেকাংশেই সুরক্ষিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা। এ রাজ্যে নারীপাচার রোধে তদন্ত এবং এই সংক্রান্ত বিচারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এবং তা ২০১১ সাল অর্থাৎ তৃণমূল সরকারের ক্ষমতায় আসার বছর থেকেই। না রাজ্যের শাসক দলের কোনও নেতা-মন্ত্রীর মন্তব্য নয়, প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশন (আইজেএম) প্রকাশিত ‘উমিদ’ বইয়েই প্রকাশিত হয়েছে এই তথ্য। যৌন পেশায় নামাতে বাংলায় পাচার সংক্রান্ত ৫০টি মামলার সাজা এই বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে।
বইটি প্রকাশ করেছেন রাজ্যের শিশু ও নারী উন্নয়ন এবং সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা। বইটিতে দাবি করা হয়েছে, এফআইআর হওয়া থেকে দ্রুত বিচার করে সাজা দেওয়া, রাজ্যে এই মামলায় সময় আগের থেকে অনেক কম লাগছে। এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের এলাকায় হওয়া একটি মামলার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে বড়তলা থানার একটি মামলায় একবছরের মধ্যেই অপরাধীকে সাজা দেওয়া হয়। মামলাটিতে পুলিশ ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা দেয়। বিচার ভবনে নবম ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে হওয়া এই মামলায় ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের শেষে অভিযুক্ত দু’জন মহিলাকে সাজা দেওয়া হয়।
কখনও বিয়ের টোপ, আবার কখনও কাজের টোপ। দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে পাচারকারীরা এভাবেই মহিলাদের পাচার করে দিচ্ছে। মূলত গ্রামের বালিকা বা নারীরাই লক্ষ্য হয় তাদের। প্রতিবেশী দেশ নেপাল থেকেও এদেশে পাচার হয়ে আসছেন নারীরা। হাত ঘুরে তাঁরা পৌঁছে যাচ্ছেন যৌনপল্লীতে। আবার কখনও স্যালন বা ম্যাসাজ পার্লারের আড়ালে বা কোনও আবাসনে গোপনে তাঁদের বাধ্য করা হয় যৌন পেশাকে বেছে নিতে। কাজের সুবিধের জন্য আধুনিক প্রযুক্তিও ব্যবহার করছে অপরাধীরা। খরিদ্দারের মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে ছবি। উল্লেখ করা থাকছে টাকার অঙ্কও।
সম্প্রতি বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের স্পেশাল ব্রাঞ্চ নিউ টাউনের একটি ব্যক্তিগত আবাসন থেকে উদ্ধার করে ১৬ বছরের এক নাবালিকাকে। সাহায্য করে আইজেএম। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই নাবালিকা অষ্টম শ্রেণির পর আর লেখাপড়া করেনি। বাবা এবং মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদের পর থাকত দাদুর কাছে। সংসারের আর্থিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে তাকে বাধ্য করা হয় এই পেশায় নামতে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সুপর্ণা মণ্ডল, অভিজিৎ মণ্ডল এবং পায়েল হীরা নামে ৩ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
আবার ২০১২-তে বাসন্তী থানার একটি মামলায় দেখা গেছে, পাচার হওয়া এক নারী পুনে থেকে এক বছর বাদে টেলিফোনে তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরে ঘটনার কথা জানান। ভাইয়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে এ রাজ্যের পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। গ্রেপ্তার করে আনা হয় দুই অপরাধীকেও। শুধু তাই নয়। মাত্র ৯২ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় চার্জশিট জমা দেওয়া হয় এবং দু’বছরেরও কম সময়ে মামলার নিষ্পত্তি হয়। সবমিলিয়ে বলা যায়, ২০১১ সাল থেকেই কলকাতা পুলিশ, রাজ্য পুলিশ এবং সিআইডি এই ধরনের মামলায় খুবই দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে।