‘আমি তো খান টাইগারের বেগম হয়ে যাচ্ছিলাম। আমাকে অপহরণ করতে এসেছিল। সে রাতে যদি আমি এবং আমার মা বোরখা পরে দিনাজপুর থেকে পালাতে না পারতাম।’ বুধবার রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) পাশ হওয়ার ঠিক পরের দিন, বৃহস্পতিবার এমনই টুইট করেছিলেন বিজেপি সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। আর তারপর থেকেই উঠছে একগুচ্ছ প্রশ্ন।
যেমন- চার দশক আগে বোরখায় মুখ ঢেকে যদি কেউ সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে ঢুকে পড়েন, তা হলে তাঁকে কি এখন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ)-এর আওতায় শরণার্থী থেকে নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে? যদি করতে হয়, তা হলে এখন তাঁর অবস্থান কী? তিনি কি এ দেশে জনপ্রতিনিধি হয়ে সংসদ বা বিধানসভায় থাকতে পারেন? যদি না পারেন, তা হলে সরকারি ভাবে নাগরিকত্ব পাওয়ার আগে তাঁর সাংসদ বা বিধায়ক পদ খারিজ হবে না কেন? শুধু তাই নয়। কেউ কেউ সরাসরি এই প্রশ্নও তুলছেন যে, রূপা কি তা হলে এখন শরণার্থী? তাঁকে কি নয়া আইনে নাগরিকত্বের আবেদন জানাতে হবে?
এ নিয়ে সরাসরি বিজেপি সাংসদের বক্তব্যকে হাতিয়ার করে রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘রূপা গঙ্গোপাধ্যায় তো নিজেই বলছেন, উনি বোরখা পরে এসেছেন। উনি তো নিজের পরিচয় প্রকাশ করেননি! সে ক্ষেত্রে তো উনি নাগরিক নন, এক জন অনুপ্রবেশকারী! তা হলে বিজেপি তাঁকে সাংসদ করল কী করে? এখনই ওঁর পদত্যাগ করা উচিত।’ এর জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আবার বলেছেন, ‘রূপা শরণার্থী হয়ে থাকলে কালই নাগরিকত্বের আবেদন করবেন এবং পেয়েও যাবেন। আর শরণার্থী অবস্থায় বাংলা, আসাম— অনেক রাজ্য থেকেই অনেকে সাংসদ হয়েছেন।’ তাঁর এই বক্তব্য থেকে উঠে এসেছে আরও এক ঝাঁক প্রশ্ন।
এক, ‘অ-নাগরিক’ সাংসদদের নিয়ে গঠিত সরকার কি বৈধ? দুই, রূপার মতো যত মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছেন, তাঁদের প্রায় সকলেই ইতিমধ্যে এ দেশে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, গাড়ি চালানোর লাইসেন্স, পাসপোর্ট-সহ নাগরিকত্বের নানা বৈধ নথি পেয়েছেন। অনেকের নিজস্ব সম্পত্তিও আছে। তাঁদের অনেকেই এ দেশে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি বা ব্যবসা করছেন। সে ক্ষেত্রে আইনি পথে ‘নাগরিকত্ব’ পাওয়ার আগেকার ওই সব নথি কি গ্রাহ্য়? যদি গ্রাহ্য না হয়, তা হলে তাঁরা কি শরণার্থী হিসাবেই নাগরিকত্বের অধিকার ভোগ করছেন? এটা কি স্ববিরোধিতা নয়?
তবে বিজেপি-সহ গেরুয়া শিবিরের নেতারা এখন নয়া তত্ত্বের আমদানি করেছেন— ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, গাড়ি চালানোর লাইসেন্স, পাসপোর্ট-সহ যে ১৪টি নথি এখন ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহ্য হয়, তার একটাও নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। স্বাধীনতার পর একের পর এক ভোট দিয়ে যাঁরা সরকার গড়েছেন, তাঁরাও নাগরিক নন। সিএএ-র আওতায় সকলকেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হবে। তবে এ নিয়েও বিরোধী থেকে শুরু করে নেটিজেনদের আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে গেরুয়া শিবির তথা মোদী সরকারকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের খোঁচা, যাঁরা ভোট দিয়ে সরকার গড়েছেন তাঁরা নাগরিক না হলে, তাঁদের ভোটে জেতা সরকারও অবৈধ বলে ঘোষণা করা হোক।