আগামী ৫ বছরের মধ্যে ভারতের অর্থনীতিকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার বুলি আউড়িয়ে দেশবাসীকে যে স্বপ্নের ফানুসে চড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, এক বছর পেরনোর আগেই তা ফুটো হয়ে গিয়েছে। দেশে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার নেমে গিয়েছে ৪.৫ শতাংশে। যা গত ৬ বছরে সর্বনিম্ন। তবে এই নিয়ে দেশ যখন সরগরম, তখন বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এনে গত দু’দিনে গোটা দেশের নজর বেহাল অর্থনীতি থেকে ঘুরিয়ে দিতে পেরেছে মোদী সরকার। কিন্ত সেটা সাময়িক। কেননা, এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দফতর (এনএসও) জানিয়েছে, অক্টোবরেও দেশের কলকারখানায় উৎপাদন কমেছে ৩.৮ শতাংশ!
সরকারের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে গতকাল জাপানি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নোমুরা জানিয়েছে, অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার আরও কমে ৪.৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে। উল্লেখ্য, গত প্রায় দু’বছর ধরে জিডিপি বৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে কমছে এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) তা ৫ শতাংশে নেমে আসে। জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্বে অর্থনীতির বৃদ্ধি আরও স্লথ হয়ে ৪.৫ শতাংশে দাঁড়ায়। নোমুরার অনুমান, জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির অভিমুখ খানিকটা ঘুরে দাঁড়াতে পারে এবং ওই তিন মাসে ভারতীয় অর্থনীতি ৪.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে সংস্থাটির অনুমান।
টানা তিন মাস কলকারখানায় উৎপাদন কমে আসার প্রধান কারণ বিদ্যুৎ, কয়লা, তেল, পেট্রোরসায়ন, পরিকাঠামো, সিমেন্টের মতো দেশের আটটি বুনিয়াদি শিল্পক্ষেত্রেই উৎপাদন কমছে। এনএসও পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, অক্টোবরে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে ১২.২ শতাংশ, কলকারখানায় ব্যবহৃত মেশিন-যন্ত্রাংশের উৎপাদন কমেছে ২১.৯ শতাংশ, খনিতে উৎপাদন কমেছে ৮ শতাংশ, পরিকাঠামোয় ৯.২ শতাংশ! ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির হার ২.১ শতাংশে নেমে এসেছে কনজিউমার ডিউরেবলস বা গাড়ি, টিভি, ফ্রিজের মতো পণ্যের উৎপাদন ১৮ শতাংশ কমে আসায়।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একটি সমীক্ষা রিপোর্টেও উঠে এসেছে, ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পক্ষেত্রে দুর্যোগ দ্রুত কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে দেশের বিভিন্ন কলকারখানায় পণ্য উৎপাদন হচ্ছিল কারখানার মোট উৎপাদন ক্ষমতার ৭৩.৬ শতাংশ ব্যবহার করে। জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে কলকারখানাগুলিতে উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহারের অনুপাত কমে দাঁড়িয়েছে ৬৮.৯ শতাংশ। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘কলকারখানাগুলিতে উৎপাদন ক্ষমতার সীমিত ব্যবহারই ইঙ্গিত দেয় শিল্পক্ষেত্রে মন্দার পরিস্থিতি কতটা সুদূরপ্রসারী এবং সেই কারণে গোটা ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে মনোভাব অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক।’
আর নোমুরার অর্থনীতিবিদ সোনাল ভার্মা বলেন, ‘অর্থনীতিকে টেনে তুলতে হলে এখন সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে।’ অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস গ্লোবাল রেটিংস বলেছে, ‘ভারতের অর্থনীতির বৃদ্ধির হার কমতেই থাকলে তারা বাধ্য হবে ভারত সরকারের ঋণপত্রে বিনিয়োগের ঝুঁকির সঙ্কেত বাড়াতে।’ সিঙ্গাপুরে এসঅ্যান্ডপি’র রিসার্চ অ্যানালিস্ট অ্যান্ড্রু উড বলেন, ‘আমাদের অনুমান, আগামী কয়েক বছরে ভারতীয় অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু, সেই বৃদ্ধি যদি না আসে তবে ধরে নিতে হবে দেশের অর্থনীতির গোড়ায় গলদ রয়েছে এবং সে ক্ষেত্রে আমরা রেটিং কমাতে পারি।’ উল্লেখ্য, বর্তমানে ভারতকে বিবিবি- রেটিং দিয়ে রেখেছে এসঅ্যান্ডপি।