আগেই পাস হয়ে গিয়েছিল লোকসভায়। এবার রাজ্যসভাতেও ১৬৩-০ ভোটে পাশ হয়ে গিয়েছে ১২৬তম সংবিধান (সংশোধনী) বিল। এবার এ নিয়েই রাজ্যসভায় মুখ খুললেন তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশে ধর্মীয় উৎপীড়ন নিয়ে চিন্তিত মোদী সরকার এ দেশের সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণ তুলে দিচ্ছে! তবে সংসদ ও বিধানসভা থেকে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান প্রতিনিধিত্বের সংরক্ষণ প্রত্যাহার করলেও তাঁরা ‘ইন্ডিয়ান’ থেকে যাবেন।
গতকালের আলোচনায় ভাঙা গলায় ভাষণ দিয়েছেন ডেরেক। আর সেই ভাষণে আগাগোড়াই মোদী সরকারকে তুলোধোনা করেছেন তিনি। বিজেপি বিরোধীদের বিরুদ্ধে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান নিয়ে ভোট-রাজনীতি করার অভিযোগ তোলায় ডেরেক পাল্টা বলেন, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানকে রাজ্যসভায় পাঠিয়ে মোটেই ভোট-রাজনীতি করেননি। তিনি বরাবরই সব ধর্ম, সব জাতির প্রতিনিধিত্বে বিশ্বাস রাখেন।
ডেরেকের সাফ কথা, ‘বিজেপি–র মুখে এ কথা মানায় না। আপনারা শুধু অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের সংরক্ষণ তুলে দিচ্ছেন তাই নয়, সেইসঙ্গে সমগ্র সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব অস্বীকার করতে চাইছেন। তাই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাত্র ২৯৬ জনের কথা বলেছেন।’ সেইসঙ্গে তিনি এ কথাও জোর দিয়ে বলেন যে, ‘অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় নয়। কিন্তু, সংখ্যাটা মোটেই ২৯৬ নয়। সাড়ে তিন লাখের ছোট্ট সম্প্রদায়।’
সংবিধান সংশোধনী প্রসঙ্গে তাঁর তোপ, তফসিলি জাতি ও উপজাতি সংরক্ষণের মেয়াদ আরও ১০ বছর বাড়াতে চাইছে সরকার। ১০ বছরের পরিবর্তে বিশ, ত্রিশ বছর মেয়াদ বাড়ালেও সমর্থন করবে তৃণমূল। কিন্তু, বাংলায় এসসি, এসটি কমিশন গঠনের বিল পাশ হলেও রাজভবনে আটকে রয়েছে। সংবিধান সংশোধনীর অন্য অংশে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের সংরক্ষণ বিলোপ করা হচ্ছে। আপত্তি এখানেই।
ডেরেকের সাফ কথা, বুধবার নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল পাশ করার সময় প্রতিবেশী দেশে ধর্মীয় নিপীড়নের কথা বলা হয়েছে। এসব বলবেন না। এ দেশে কী হচ্ছে? সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণ প্রত্যাহার করা হচ্ছে। কেন্দ্রকে তাঁর কটাক্ষ, ‘আপনারা দুজন সাংসদ বা ১৩ জনের বিধায়ক পদ কেড়ে নিতে পারেন। কিন্তু, আপনারা অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের কাছ থেকে ইন্ডিয়ান শব্দটা কেড়ে নিতে পারবেন না।’
রেল, সেনা এবং ক্রীড়া ও শিক্ষাক্ষেত্রে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের কৃতিত্বের উল্লেখ করে ডেরেক বলেন, ১৯৬০-এর বম্বে-হাওড়া মেলের চালক পার্সি ক্যারলের গল্প সবাই জানেন। তিনি সমস্ত যাত্রীর প্রাণ বাঁচিয়ে নিজে মারা গিয়েছিলেন। তিনি ভাবেননি কে হিন্দু, কে মুসলিম। ভারত-পাক যুদ্ধে সশস্ত্র সেনায় দু’সপ্তাহে তিনজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান পরমবীর চক্র পেয়েছেন। গত প্রজাতন্ত্র দিবসে ‘ফ্লাই পাস্ট’-এ কে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন? তিনি গ্রুপ ক্যাপ্টেন এলভিস।’
এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, ১৯৪৭-এ ব্রিটিশরা যাওয়ার সময় অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের আন্দামানে পৃথক রাজ্য গঠনের প্রলোভন দিয়েছিল। তাঁরা যাননি। তাঁরা মূল ভূখণ্ডে থেকে গিয়েছিলেন। সেই সময় গণপরিষদের সদস্য ফ্র্যাঙ্ক অ্যান্টনি বলেছিলেন, ‘আমরা যত ভারতকে ভালবাসব, ভারত তার চেয়ে বেশি ভালবাসা দেবে আমাদের।’
একইসঙ্গে কুইজের প্রসঙ্গও টেনে আনেন ডেরেক। বলেন, ‘বর্তমানে বচ্চন ও সিদ্ধার্থ বসুর কুইজ জনপ্রিয়। স্বাধীনতার বিশ বছর পরে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরাই ভারতকে কুইজ ও সাধারণ জ্ঞানের প্রতিযোগিতা উপহার দিয়েছিল।’ নিজের বাবা নীল ও’ব্রায়েনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আজ আমি ভাঙা গলায় কথা বলছি, এই জোর আমাকে দিয়েছেন আমার বাবা-মা নীল ও জোয়েস।’ এরপরই রসিকতার সুরে তিনি বলেন, ‘কোন সম্প্রদায়ের নামে ইন্ডিয়ান আছে? অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান।’
তবে রসিকতা করলেও, মোদী সরকারকে বিঁধতে ছাড়েননি তিনি। আক্রমণের ধার বাড়িয়ে ডেরেক এ-ও বলেছেন যে, ‘গতকাল ভুল উদাহরণ দিয়েছি। আসলে নাৎসি কপিবুক নয়, এই সরকারের কর্মকাণ্ড তার থেকেও খারাপ। কপিবুক বলা হলে নাৎসিদের অপমান করা হয়।’