পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে বহু যুগ আগে সাগরতটের এই বালুকাময় প্রান্তরে কপিলমুনির অভিশাপে ভস্ম হয়ে গিয়েছিল অযোধ্যার পরাক্রমশালী সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র। দীর্ঘ তপস্যার পর অভিশপ্ত পিতৃপুরুষের আত্মাদের উদ্ধারের জন্য গঙ্গাকে জলধারা রূপে কপিলমুনির তপস্থলিতে টেনে এনেছিলেন ভগীরথ। সেই জলের স্পর্শে পিতৃপুরুষদের উদ্ধারের পাশাপাশি সাগরের সঙ্গে গঙ্গাকে মিলিয়ে দিয়ে তীর্থশ্রেষ্ঠ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। মকর সংক্রান্তি তিথিতে ভগীরথের সেই পুণ্যতীর্থ পবিত্র গঙ্গা ও সাগরের মিলনধারায় পুণ্যস্নানে আসেন লাখো লাখো পুণ্যার্থী। এই বিশাল সংখ্যক পুণ্যার্থী ও পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে সাগরের কপিলমুনির মন্দিরকে ঘিরে তার চারপাশ নতুনভাবে সাজাচ্ছে রাজ্য।
ত্রিমাত্রিক দেওয়াল মূর্তির(মুরাল) মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে ভারতের ১২ টি শাস্ত্রীয় ও বাংলার লোকনৃত্যের মুহূর্ত। এতগুলি নৃত্যের ভঙ্গি নিয়ে একসঙ্গে থ্রি-ডাইমেনশনের এমন কাজ ভারতের মধ্যে এখানেই প্রথম হল বলে গঙ্গাসাগর-বকখালি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দাবি। পাশাপাশি, কপিলমুনির মন্দিরের সামনে ডানদিকে গ্র্যানাইট পাথর ও নুড়ি দিয়ে সাজানো ঝকঝকে জলাশয়ের ভিতর ফোয়ারার মধ্যে বসানো হয়েছে গঙ্গার সুন্দর পাথরের মূর্তি। থাকছে লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের ব্যবস্থাও। এছাড়া কপিলমুনির মন্দিরের ঠিক পিছনে বয়ে যাওয়া খালের ওপর উভয় দিকে সংযোগের জন্য তৈরি হয়েছে নতুন সেতু। কেবলের কালো মোটা তার দিয়ে তা একেবারে দ্বিতীয় হুগলী সেতুর আদলে তৈরি। চলতি ডিসেম্বর মাসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে যার উদ্বোধন হতে চলেছে।
প্রসঙ্গত, মমতা সরকারের সৌজন্যে সাগরযাত্রা সুগম হতেই বিগত বেশ কয়েকবছরে জনসমাগম বেড়েছে গঙ্গাসাগরে। এ কারণে তা এখন ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্রের পরিচিতিও পাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই ওই জায়গাকে কেন্দ্র করে আরও বেশি বেশি সংখ্যায় তীর্থযাত্রী ও পর্যটকরা আসুক, এমনটাই চাইছে রাজ্য সরকার। সেই কারণে ওই জায়গায় আকর্ষণ বাড়াতে কপিলমুনির মন্দিরকে ঘিরে তার চারপাশ দৃষ্টিনন্দন করা হচ্ছে। অধিকাংশ কাজই প্রায় শেষের মুখে। ১২টি শাস্ত্রীয় ও বাংলার লোকনৃত্যের অভিনব ত্রিমাত্রিক দেওয়াল চিত্র নিয়ে গঙ্গাসাগর-বকখালি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এগজিকিউটিভ অফিসার জয়ন্ত মন্ডল বলেন, কত্থক, ভরতনাট্যম-সহ বিভিন্ন শাস্ত্রীয় নৃত্য নিয়ে কাজ ভারতের এখানেই প্রথম হচ্ছে। পর্যটক ও তীর্থযাত্রীরা যাতে একবার দেখেই চিনতে পারেন কোনটা কোন রাজ্যের নৃত্য, সেই কারণে প্রতিটির তলায় নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কপিলমুনির মন্দির লাগোয়া খালের ওপর দ্বিতীয় হুগলী সেতুর আদলে একটি সেতুও হচ্ছে।