রাজ্যপালের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পদে পদে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছেন জগদীপ ধনকড়। নিজের সাংবিধানিক এক্তিয়ার অমান্য করে তিনি সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর চেষ্টা করছেন বলে সরকারের তরফে বারবারই অভিযোগ তোলা হয়েছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে নালিশ ঠোকার পাশাপাশি সংসদেও তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে শাসকদল। কিন্তু তাতেও নিজেকে বদলাননি ধনকড়। আর রাজ্য-রাজ্যপালের এই সংঘাতের কারণেই বিধানসভার অধিবেশন বস্তুত কার্যহীন। কারণ রাজভবন থেকে ছাড়পত্র না মেলায় বিল নিয়ে আলোচনা আটকে রয়েছে।
ফলে শুক্রবারের পর সোমবারও অধিবেশন চালাতে রীতিমতো সমস্যায় পড়তে হয় সরকারপক্ষকে। এই অবস্থার জন্য ধনকড়কেই দায়ী করেছে তৃণমূল। রাজভবনের অসহযোগিতা যে বিধানসভা অধিবেশন সুষ্ঠুভাবে চালোনার পথে প্রধান প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে, এই অভিযোগ তুলেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত, বিধানসভা অধিবেশন শুরু হলেও মাঝপথে দু’দিন স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তফসিলি জাতি ও উপজাতি কমিশন গঠনের লক্ষ্যে একটি বিলের খসড়া অধিবেশনে পেশের আগে নিয়ম অনুসারে রাজ্যপালের অনুমোদনের জন্য রাজভবনে পাঠানো হয়েছিল।
কিন্তু ওই বিল রাজভবন থেকে অনুমোদন না মেলায় তা বিধানসভায় পেশ করা যাচ্ছে না। তার জেরে নির্ধারিত কার্যসূচী বদল করতে বাধ্য হয় সরকার। এই বদলকে কেন্দ্র করেই গত কয়েকদিন ধরে অধিবেশন নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধছে। যাতে উৎসাহ হারাচ্ছেন বিধায়করা। গতকাল যেমন বিধানসভার দ্বিতীয়ার্ধে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির পুরনো রিপোর্ট নিয়ে আলোচনার শুরুতে সভার কোরাম (ন্যূনতম সদস্য সংখ্যা) বজায় রাখতে সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ ফোন করতে শুরু করেন বিধায়ক ও মন্ত্রীদের। দিনের শেষে অধিবেশনে হাজিরার জন্য হুইপ জারি করতে বাধ্য হন তিনি।
অধিবেশনের এই দশার জন্য অবশ্য রাজ্যপালকেই বিঁধেছেন নির্মল। তাঁর অভিযোগ, রাজভবনে বিল আটকে রেখে তিনি সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাইছেন রাজ্যপাল। পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হচ্ছে। পাশাপাশি বিরোধীদেরও একহাত নিয়ে তিনি বলেন, বিরোধীরা নানা অজুহাতে সভাত্যাগ করছে। উল্লেখ্য, অধিবেশেনর প্রথম পর্বে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব এনে আলোচনা চেয়েছিল কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট। অধ্যক্ষ প্রস্তাব পাঠের অনুমতি দিলেও আলোচনায় রজি হননি। বিরোধীরা তার প্রতিবাদে অধিবেশন কক্ষের মধ্যে বিক্ষোভ দেখিয়ে পরে গোটা দিনের জন্য ওয়াকআউট করে।