ঝড়-বৃষ্টি হলেই টালা ব্রিজের উপর থেকে কাঠের টুকরো পড়ছিল। সন্দেহ হওয়ায় পুরসভার পুরকর্তারা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তখনই ধরা পরে পুরো টালা ট্যাঙ্কটি আলগা ভাবে যে সব সেগুন কাঠের পাতের উপরে বসানো রয়েছে, ট্যাঙ্কের মেঝে বেঁকে যাওয়ার কারণে কাঠ ও ট্যাঙ্কের সংযোগস্থল আলগা হয়ে গিয়েছে। এই কারণেই হচ্ছে বিপত্তি।
টালা ট্যাঙ্ক সংস্কারের কাজে কলকাতা পুরসভাকে সাহায্য করছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, কোনো বিপর্যয় যাতে না হয় এবং টালা ট্যাঙ্ককে ভূমিকম্প-নিরোধক করা যায় এ জন্য ‘স্যান্ডউইচ মডেল’ প্রয়োগ করা হচ্ছে ওই ট্যাঙ্ক সংস্কারে। এই মডেলের মাধ্যমে টালা ট্যাঙ্কের নীচের তলার পাতকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, টালা ট্যাঙ্ক একটি বিস্ময়! মাটি থেকে ১১০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত ওই ট্যাঙ্কটি। ২১৫টি লোহার স্তম্ভের উপরে দাঁড়ানো ট্যাঙ্কটির গভীরতা ২০ ফুট। তার উপরে ৯০ লক্ষ গ্যালন জলধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্যাঙ্কটি শুধু আলগা ভাবে সেগুন কাঠের উপরে বসানো রয়েছে। ১০০ বছরেরও বেশি সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে টালা ট্যাঙ্ক অল্পস্বল্প ‘আহত’ হলেও পুরনো প্রযুক্তির জোরেই এত দিন বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি এড়িয়েছে সে। এবার বড় ক্ষতি এড়াতে উদ্যোগী পুরসভা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ভিজিটিং প্রফেসর বিশ্বজিৎ সোম বলেন, ‘‘আমরা এই স্যান্ডউইচ মডেল প্রয়োগ করে ট্যাঙ্কের নীচের পাতের ক্ষমতা বাড়িয়ে দিচ্ছি। এর ফলে ভূমিকম্প হলে এটি বেঁকে যাওয়ার আশঙ্কা কমবে। সারা বিশ্বেই পুরনো স্টিলের কাঠামো রক্ষার ক্ষেত্রে অন্যান্য পদ্ধতির মতোই এটিও ব্যবহার করা হয়।’’
নতুন মডেলে নীচের বেঁকে যাওয়া ১০ মিলিমিটার পুরু পাতটিকে প্রথমে সোজা করা হচ্ছে। তার পরে তার উপরে তিন ইঞ্চির পুরু কংক্রিটের ঢালাই করা হচ্ছে। কংক্রিটের ওই ঢালাইয়ের উপরে আরও একটি ১০ মিলিমিটার পুরু লোহার পাত বসানো হচ্ছে। এর ফলে পুরো কাঠামোরই ক্ষমতা কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।