রাজস্থান, রাজপুত রাজাদের ভূমি। ভারতের অন্যতম পৌত্তলিক ও রাজকীয় রাজ্য হিসেবে পরিচিত। মরুভূমি, সেখানকার সংস্কৃতি, বিশেষ করে জিভে জল আনা রাজস্থানী খাবার পর্যটকদের আকর্ষণের কারণ। তাইতো প্রতিবছর সেখানে লাখ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেন। রাজস্থান একসময় রাজপুত রাজাদের ঘাঁটি ছিল। জয়পুর, যোধপুর আর জয়সলমেরের মতো অসাধারণ সব ঠিকানা রয়েছে ঘুরে দেখার জন্য। রয়েছে একাধিক দুর্গ ও কেল্লা, যা রাজস্থানের সৌন্দর্যকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।
কোথাও যাবার আগে সেখানকার আবহাওয়ার আগাম খবর নিয়ে যাওয়া ভাল। জয়পুরের আবহাওয়া বেশ উষ্ণই বলা চলে। তবে অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে গেলে অনেক ভাল একটা পরিবেশ পাবেন। তখন তাপমাত্রা অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। জয়পুরের শীতকালও অনেক চমৎকার। এখানে শীতকাল শুরু হয় নভেম্বর থেকে আর শেষ হয় ফেব্রুয়ারিতে। এই সময়ের মধ্যে গেলে আপনি বেশ কিছু উৎসবেও অংশ নিতে পারবেন। যেমন জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয় জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভাল বা সাহিত্য সম্মেলন। মার্চে পাবেন জয়পুরের বিখ্যাত হাতি উৎসব বা এলিফ্যান্ট ফেস্টিভ্যাল।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় উটের মেলা হয় রাজস্থানের পুষ্করে। শুধু মাত্র এই মেলা দেখার জন্য প্রচুর দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন। কার্তিক পূর্ণিমার আগে সাত দিন ধরে চলে এই মেলা। শেষ হয় পূর্ণিমার দিন। জগৎপিতা ব্রহ্মার মন্দিরে পুজো দিয়ে ঘরে ফেরে সকলে। কথিত আছে, কার্তিক পূর্ণিমায় হিন্দু দেবদেবীরা পুষ্কর হ্রদে নেমে আসেন। বিশ্বাস, এই পুণ্য সময়ে হ্রদের জলে স্নান করলে কঠিন অসুখ সেরে যায়, পাপ ধুয়ে যায়। এই মেলায় রাজস্থানের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উট নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। বিস্তৃত মেলা প্রাঙ্গণ ভরে থাকে হাজার হাজার উটে। অনেকে উটকে সাজান সুন্দর করে। কেনাবেচা হয় গরু-ঘোড়াও। মেলার সময়ে রাজস্থান টুরিজ়ম ব্যবস্থা করে বিলাসবহুল তাঁবুর। পুষ্কর ছাড়াও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে হয় নাগৌর মেলা। জোধপুর থেকে বিকানীর যাওয়ার পথে নাগৌর। দশ লক্ষের উপরে পশু বিক্রেতার জমায়েত হয় এখানে! একই সময়ে ডিপার্টমেন্ট অব টুরিজ়ম আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্ট আয়োজন করে বিকানের উট মেলার। এখানে উটের দৌড়, উটের নাচ, অ্যাক্রোব্যাটের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া উটের গায়ের লোম ছেঁটে করা ট্যাটু দেখলে অবাক হতে হয়। এই তিনটে মেলাতেই মনোরঞ্জনের জন্য থাকে নানা ধরনের প্রতিযোগিতা, নাচ-গান।
বুন্দিতেও হয় তীজ উৎসব। তীজের মতোই জয়পুরে মার্চ-এপ্রিলে পালিত হয় গঙ্গৌর উৎসব। উপলক্ষ দেবী গৌরীর ঘরে ফেরা। এখানেও একই ভাবে গৌরীর মূর্তি নিয়ে মিছিল-উৎসব হয়। স্বামীর আশায় কলসের মধ্যে প্রদীপ নিয়ে হাঁটেন অবিবাহিত মেয়েরা। কোথাও কোথাও পালকি, ঘোড়ার গাড়ি, হাতি থাকে সেই সমারোহে। নাচ-গানের পাশাপাশি রাতের আকাশ ঝলমলিয়ে ওঠে আতশবাজির আলোয়। এই সময়ে উদয়পুরে মেওয়ার উৎসবে মেয়েরা মেতে উঠেন বসন্তবরণে। এখানেও শিব-পার্বতীর বিগ্রহকে রাজস্থানি পোশাক পরিয়ে মিছিল করে পিচোলা লেকে আনা হয়। শহর মেতে ওঠে।
রাজস্থান-জয়পুর যেতে আপনি ইচ্ছা করলে সড়ক বা বিমান পথ যেকোন একটা ব্যাবহার করতে পারে। যদি একটু আরামে এবং দ্রুত পৌছাতে চান তাহলে আকাশ পথে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাকে দিল্লীর টিকিট কাটতে হবে। ভাড়া বিভিন্নও বিমানে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এয়ার ইন্ডিয়া বা স্পাইস জেটে গেলে সেক্ষেত্রে দশ থেকে তের হাজার টাকার মধ্যে টিকিট করতে পারবেন। দিল্লী থেকে আপনি আকাশ পথ অথবা সড়ক পথে জয়পুর যেতে পারেন। দিল্লি থেকে প্রতিদিন জয়পুরের উদ্দেশে ১৩ টি ফ্লাইট ছাড়ে। সময় লাগে ১ ঘণ্টার কিছু বেশী।