বুধবার সকালেই মন্ত্রীসভার বৈঠক ডেকে তড়িঘড়ি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল(ক্যাব)-এ অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে মোদী সরকার। আর তারপর থেকেই জল্পনা ছিল সরকার কবে বিলটি সংসদে পেশ করে তা নিয়ে। বৃহস্পতিবার বিলটি নিয়ে আলোচনার দিন স্থির করতে বৈঠকে বসে লোকসভার বিষয় উপদেষ্টা কমিটি। বৈঠকে ঠিক হয়, আগামী সোমবারই লোকসভায় পেশ করা হবে নাগরিকত্ব বিল। আর তার আগে শুক্রবারই ক্যাব নিয়ে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বললেন, প্রতিবেশী দেশের নিপীড়িতরা এ দেশের নাগরিকত্ব পেলে তাঁদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।
দিল্লীতে একটি অনুষ্ঠানে মোদী বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ থেকে কয়েকশো পরিবার এসেছে। তাঁদের ওপর সেই দেশে অত্যাচার হয়েছে এবং ‘মা ভারতী’র ওপর তাঁদের আস্থা রয়েছে। নাগরিকত্বের রাস্তা খুললে তাঁদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।’ কিন্তু এই তালিকা থেকে মুসলিমদের কেন বাদ দেওয়া হচ্ছে, আর কেনই বা দেশের সংবিধানের বিপক্ষে গিয়ে ধর্মভিত্তিক নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে, মোদীর কথায় তার ব্যাখ্যা নেই। স্বাভাবিকভাবেই এই বিলের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলি ইতিমধ্যেই সুর চড়াতে শুরু করেছে। বিলের বিরোধিতা করে দেশের উত্তরপূর্বে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিক্ষোভ।
বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, নাগরিক বিলে কোথাও সরাসরি বলা না হলেও পরোক্ষে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা শরণার্থীরা যদি মুসলিম হন, তা হলে এ দেশের নাগরিকত্ব পাবেন না। যদিও বিজেপিও ব্যস্ত পাল্টা প্রচারে। কেন এই বিল আনা হচ্ছে, তা বোঝানোর জন্য আরএসএস শীঘ্রই ওয়েবসাইট শুরু করতে চলেছে। আরএসএসের এক নেতার মতে, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ভুল ছিল। তা সংশোধন করা সাংবিধানিক দায়িত্ব। ২-৩ কোটি মানুষ লাভবান হবেন এই বিল পাশ হলে।’
উল্লেখ্য, সংসদের একটি কমিটিকে কেন্দ্রের গোয়েন্দা বিভাগের তরফে বছরের গোড়ায় জানানো হয়েছিল, ৩১,৩১৩ জন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু সে দেশে নিপীড়িত হয়ে ভারতে শরণ নিতে চাইছেন। তাঁদের দীর্ঘ সময়ের জন্য ভিসা দেওয়া হয়েছে। অনেক বছর ধরে তাঁরা এ দেশে থাকায় নাগরিকত্ব দিতে কোনও অসুবিধা নেই। এই ৩১,৩১৩ জনের মধ্যে হিন্দু ২৫,৪৪৭ জন, শিখ ৫,৮০৭ জন, খ্রিস্টান ৫৫ জন, বৌদ্ধ ২ জন এবং পার্সি ২ জন। বিজেপির এক সূত্রের দাবি, এই সংখ্যাটি শুধুমাত্র প্রতিবেশী দেশের সেই নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের, যাঁরা আনুষ্ঠানিক ভাবে এ দেশের নাগরিক হতে চাইছেন। আসল সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি। একবার প্রক্রিয়া শুরু হলে আসল তথ্য সামনে আসবে।