বুধবার সকালেই সাত তাড়াতাড়ি মন্ত্রীসভার বৈঠক ডেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল(ক্যাব)-এ অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে মোদী সরকার। আগামী সোমবার লোকসভায় পেশ হবে বিলটি। তারপর মঙ্গলবার ৪ ঘণ্টার আলোচনা শেষে হবে ভোটাভুটি। তবে এই বিল পেশের আগে থেকেই প্রকাশ্যে বাঙালিদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে আসামে।
ক্ষুব্ধ সারা আসাম ছাত্র সংস্থা বা আসু শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছে, ‘ক্যাব পাশ হলে আসাম ’৮৩ সালের মতোই ফের জ্বলে উঠবে।’ আসু-র ‘চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িক’ মন্তব্যেও পুলিশ নিষ্ক্রিয়। যা দেখে প্রশ্ন উঠছে আসামে কি ‘জঙ্গলের রাজত্ব’ কায়েম হয়েছে?
আসামে আসু-র এই হুমকির পাশাপাশি মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে বিশাল মেগামার্ট-এর সামনে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গীরা। ক্যাব বাতিলের দাবিতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে। ক্যাব বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবার উত্তর পূর্বাঞ্চল বনধের ডাক দিয়েছে নেসো (উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় ছাত্র সংগঠন)। গোটা উত্তর-পূর্বেই এই মুহূর্তে ক্যাব বিরোধী আন্দোলন চলছে।
শুক্রবার ক্যাব বিরোধিতায় গুয়াহাটির কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আসু-র ডাকে অনুষ্ঠিত হয় ‘রণ হুঙ্কার’। সেখানে ছাত্রছাত্রীরা ক্যাব-এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের নিজের এলাকা সাবুয়ায় উলঙ্গ হয়ে প্রতিবাদে শামিল হন আসু-র সমর্থকরা।
আসামের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী জুবিন গর্গ জানিয়েছেন, ‘৭১ সালের আগে আসামে আসা ভগবানকেও জায়গা ছাড়া হবে না।’ তিনিও আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। কোচ রাজবংশীরা হুমকি দেন, ক্যাব চালু হলে আসামকে অস্থির করে তোলা হবে।
আসু ফের বাঙালি বিদ্বেষের রাজনীতিতে ফিরে গেল শুক্রবার। গুয়াহাটিতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ল্যুরিমজ্যোতি গগৈ প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন, ক্যাব পাশ হলে আসাম ফের ফিরে যাবে ’৮৩-র বিভীষিকাময় দিনগুলিতে।
উল্লেখ্য, আসুর ‘বঙাল খেদা’ আন্দোলন ভয়ঙ্কর চেহারা নেয় ১৯৮৩ সালে। বহু বাঙালি অসম ছাড়তে বাধ্য হন। গুয়াহাটির কাছে নেলিতে গণহত্যায় প্রাণ হারান সরকারি হিসাবেই ২ হাজারেরও বেশি মানুষ। আবার সেই দিন ফিরিয়ে আনার হুমকি দিয়েছে আসু।
আর পুলিশ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অসম রাজ্য নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমন্বয় সমিতি (সিআরপিসিসি)-র চেয়ারম্যান তপোধীর ভট্টাচার্য। তাঁর প্রশ্ন, ‘অসমে আমরা কি জঙ্গলের রাজত্বে বাস করছি? হিটলারের কার্যকলাপকেও তো ছাড়িয়ে যাচ্ছে এঁরা। নির্লজ্জতার চরম সীমায় পৌঁছে গেছে।’