বুধবার সকালেই সাত তাড়াতাড়ি মন্ত্রীসভার বৈঠক ডেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল(ক্যাব)-এ অনুমোদন দেয় মোদী সরকার। আর তারপর থেকেই জল্পনা ছিল সরকার কবে বিলটি সংসদে পেশ করে তা নিয়ে। বৃহস্পতিবার বিলটি নিয়ে আলোচনার দিন স্থির করতে বৈঠকে বসে লোকসভার বিষয় উপদেষ্টা কমিটি। বৈঠকে ঠিক হয়, আগামী সোমবার লোকসভায় তা পেশ করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মঙ্গলবার ভোটাভুটিতে লোকসভায় বিলটি পাশ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তারপর পাঠানো হবে রাজ্যসভায়।
তবে এরই মধ্যে বিলটিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিরোধীরা। ধর্মনিরপেক্ষ দেশে শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার চেষ্টাকেই কাঠগড়ায় তুলবে তারা। তাদের অভিযোগ, এটি ‘অসাংবিধানিক বিল’। এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবারই প্রস্তাবিত বিল নিয়ে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। দিল্লীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘প্রতিবেশী দেশে বহু মানুষ নিপীড়িত হচ্ছেন। ভারতের প্রতি তাদের আস্থা আছে। তাঁদের নাগরিকত্ব পাওয়ার রাস্তা খুলে দেওয়া হচ্ছে, যাতে তাঁদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয়।’
উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত বিলের খসড়ায় দেখা যাচ্ছে, ১৯৫৫–র নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের যে প্রস্তাব আনা হয়েছে তা থেকে বাদ রাখা হয়েছে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিল এবং ‘বেঙ্গল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেগুলেশন, ১৮৭৩’–এর অধীন ‘দ্য ইনার লাইন’ নোটিফায়েড এলাকাগুলিকে। যেমন আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম ও ত্রিপুরার আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলি। বলা হয়েছে, বিল পাশ হয়ে আইনে রূপান্তরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ খারিজ হবে। তাঁরা নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন।
পুরনো আইনের তৃতীয় তফসিল সংশোধন করে যে বাক্যাংশ যুক্ত করার প্রস্তাব আনা হয়েছে, তা হল— ‘হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ভুক্ত যে সব মানুষ আফগানিস্তান, বাংলাদেশ অথবা পাকিস্তান থেকে আসা শরণার্থী, যারা মোট ৫ বছর ভারতে বসবাস করছেন অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে চাকরি করছেন....’। আগে ১১ বছর বসবাস করার পর এই সুযোগ পাওয়া যেত।
অন্যদিকে, আগামী সোম থেকে বৃহস্পতিবারের জন্য সংসদের দুই কক্ষেই উপস্থিত থাকার হুইপ জারি করেছে তৃণমূল। তৃণমূলের বক্তব্য, প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব বিলটি এ দেশের ‘আত্মা-বিরোধী’ এবং ‘আদিবাসী-বিরোধী’। শুক্রবার তৃণমূলের প্রধান জাতীয় মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন জানিয়েছেন, ‘এনআরসি এবং নাগরিকত্ব বিল পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। রাজনৈতিক উদ্দেশে এই বিল আনা হয়েছে। তবে, যেভাবে অসমে এনআরসি ব্যর্থ হয়েছে, একই ভাবে এই বিলও ব্যর্থ হবে।’
তিনি আরও জানিয়েছেন, দলের তরফে লোকসভায় এই বিলের বিরুদ্ধে বলবেন দুই সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যসভায় বলবেন তিনি। দলের আরেক সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, শুধুমাত্র বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা নয়, আমাদের নেত্রী ধর্ম নিয়ে রাজনীতির প্রধানতম সমালোচক।