আগামী ৫ বছরের মধ্যে ভারতের অর্থনীতিকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার বুলি আউড়িয়ে দেশবাসীকে যে স্বপ্নের ফানুসে চড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, এক বছর পেরনোর আগেই তা ফুটো হয়ে গিয়েছে। দেশে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার নেমে গিয়েছে ৪.৫ শতাংশে। যা গত ৬ বছরে সর্বনিম্ন। কিন্তু এ নিয়ে বিন্দুমাত্র উচ্চবাচ্য না করেই মোদী দাবি করলেন, অর্থনীতির গতি বাড়াতে তাঁর সরকার চারটি পদক্ষেপ করেছে— করের বোঝা কমানো, ব্যবসার পরিবেশ সহজ করা, শ্রম আইন সংস্কার ও বিলগ্নিকরণের পথে হাঁটা। তাঁর কথায়, ‘বৃদ্ধির গতি বাড়াতে সাধারণত এই চারটি বিষয়ই বিবেচিত হয়।’
গতকাল দিল্লীতে এক সম্মেলনে মোদীর ঘোষণা, বেসরকারি লগ্নী বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশে বিশ্বমানের পরিকাঠামো গড়তে শীঘ্রই ১০০ লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্প শুরু করবে কেন্দ্র। একই সঙ্গে শিল্প ও ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রকে তাঁর আশ্বাস, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ককর্তা খাঁটি ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিলে ভয়ের কারণ নেই। অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও ব্যবস্থা নেওয়ার আগে ব্যাঙ্ক ও আর্থিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সিদ্ধান্ত যাচাই করানো হবে। শীঘ্রই এই ব্যবস্থা চালু হবে। ঋণ দিতে ভয় পাওয়া নিয়ে ব্যাঙ্ককর্তাদের আশ্বস্ত করতে তাঁর অভয়বাণী, ‘ব্যাঙ্ক অফিসার নিজেকে অসহায় মনে করলে সরকার তাঁকে একা ছাড়তে পারে না। আমি এমন লোক যে, নিজে দায়িত্ব নিই। দায়িত্ব থেকে পালাই না।’
আয় নিয়ে মানুষের অনিশ্চয়তার জেরে বাজারে চাহিদা না থাকাকেই অর্থনীতির ঝিমুনির জন্য দায়ী করেছেন অর্থনীতিবিদরা। আবার বিক্রি নেই বলেই শিল্প নতুন লগ্নী করছে না। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন এক নিবন্ধে এই পরামর্শ দিয়েছেন যে, কর ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে থিতু করতে হবে। শিল্পের সঙ্গে প্রস্তাবিত বদল নিয়ে কথা বলতে হবে। যাতে তারা মানানোর সময় পায়। তাঁর মতে, বিলগ্নিকরণের লক্ষ্য শুধু রাজকোষ ঘাটতি মেটানো হতে পারে না। মোদী অবশ্য এ সব প্রশ্নে না গিয়ে নিজের বড়াই করতেই সময় দিয়েছেন।