বুধবার সকালেই মন্ত্রীসভার বৈঠক ডেকে তড়িঘড়ি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল(ক্যাব)-এ অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে মোদী সরকার। তবে এই বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হলে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে আদিবাসীদের জনজীবনে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছে তৃণমূল। সরাসরি বিলটিকে আদিবাসী-বিরোধী আখ্যা দিয়েছে তারা।
সোমবার লোকসভায় পেশ হবে বিলটি। মঙ্গলবার ৪ ঘণ্টা আলোচনা হবে। তারপর ভোটাভুটি হবে। তৃণমূলের তরফে বিলের বিরোধিতা করে বক্তব্য পেশ করবেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভায় পাশ হলে বুধবার রাজ্যসভায় আনা হতে পারে বিলটি। সেখানেও বিলের বিরোধিতা করবে তৃণমূল।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে ভারতে চলে আসা হিন্দু, খ্রিস্টান, জৈন, পার্সি ও বৌদ্ধদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। বিরোধী শিবির মনে করছে, এবার নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল রাজ্যসভাতেও পাশ করিয়ে নিতে পারবে সরকার।
কারণ, নাগরিকত্ব বিলে মোদী সরকারের পাশেই থাকবে শিবসেনা, টিআরএস, বিজেডির মতো দলগুলি। আর জেডি (ইউ) ও বসপা-সহ কয়েকটি দল রাজ্যসভা থেকে ওয়াকআউট করে সরকারকে সুবিধা করে দিতে পারে। মনোনীত সদস্যদের সমর্থনও পাবে বিজেপি। রাজ্যসভায় মোট আসন ২৪৫। ৭টি আসন ফাঁকা রয়েছে। বাকি ২৩৮টির মধ্যে এনডিএ-র হাতে রয়েছে ১০২টি, আর কোনও দিকেই নেই এমন সংখ্যা ৩৯। ফলে ১২০ জনের সমর্থন পাওয়া কঠিন নয়।
সূ্ত্রের খবর, এবার খসড়া বিলে নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী থেকে বাইরে রাখা হয়েছে ইনার পারমিট চালু থাকা মিজোরাম, অরুণাচল ও নাগাল্যান্ডকে এবং ষষ্ঠ তপশিলের অন্তর্ভুক্ত অসমের বড়োল্যান্ডের অধীন ৪টি জেলা, ডিমা হাসাও, পূর্ব-পশ্চিম করিডর, মণিপুর ও মেঘালয়ের স্বশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষিত এলাকাগুলি। এই সব জায়গা থেকে ‘বিদেশি’দের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিরোধিতা করা হচ্ছিল।
সরকার বিলে পরিবর্তন করার পর অগপ-সহ বিভিন্ন দল বিরোধিতা থেকে সরে আসবে বলে সরকার আশা করছে। তবে তৃণমূলের বক্তব্য, প্রস্তাবিত আইনে সংশোধন করা হলে সরাসরি তার কুপ্রভাব পড়বে আদিবাসী-অধ্যুষিত অঞ্চলে। চাপ বাড়বে অসমের সমতল অংশে। ফলে উত্তর–পূর্বের রাজ্যগুলির জনবিন্যাসে চাপ বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা তথা প্রধান জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনের কথায়, ‘দেশবাসীকে মোদী সরকার ভাঁওতা দিয়ে চলেছে। আসামে নাগরিকপঞ্জী ব্যর্থ হয়েছে। যে ১৯ লক্ষের নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের মধ্যে ১২ লক্ষই হিন্দু। স্পষ্টতই বিজেপি হিন্দু-বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত হয়েছে। এখন ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে নাগরিকত্ব বিল এনে ধর্মের ভিত্তিতে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার কৌশল নেওয়া হচ্ছে। যা আসলে আদিবাসী-বিরোধী।’