এ এক নতুন সকাল। যে সকালের তীব্রতা অনেকখানি। গত ২৮ নভেম্বর যে ঘটনার ভয়াবহতায় কেঁপে উঠেছিল গোটা দেশ, পশু চিকিৎসক প্রিয়াঙ্কা রেড্ডির পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া দেহ। মৃত্যুর আগে নির্মম ভাবে ধর্ষিতা হয়েছিলেন তিনি। আজ সমাপতন হল সেই ঘটনার। আজ ভোরবেলা হেফাজত থেকে পুলিশের বন্দুক ছিনিয়ে পালাতে গিয়ে এনকাউন্টারে মারা গেলেন ৪ ধর্ষক। এনকাউন্টারের খবর সামনে আসার পরেই খুশির হাওয়া গোটা দেশ জুড়ে।
তদন্তের জন্য তাদের তেলেঙ্গানার সাদনগরের ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। পুলিশের দাবি, সেখান থেকেই পালানোর চেষ্টা করে তারা। তারপরই পুলিশের গুলিতে অভিযুক্তদের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন সাইবরাবাদের পুলিশ কমিনশনার। ঘটনাস্থলে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
২৬ বছরের ওই তরুণীর দেহাংশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে সাইবারাবাদ পুলিশ। মহম্মদ আরিফ (২৬), জল্লু শিবা (২০), জল্লু নবীন (২০) এবং চিন্তকুন্ত চেন্নাকেশভুলু (২০) নামে এই চার জনই ট্রাকের কর্মী। তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুন, ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণ ও ৩৬২ ঝারায় অপহরণের অভিযোগ আনা হয়।
গত ২৭ নভেম্বর হায়দ্রাবাদের অদূরে সামশাবাদের টোলপ্লাজায় স্কুটি রেখে অন্য এক চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে যান তরুণী। রাত সাড়ে নটা নাগাদ স্কুটি নিতে গিয়ে দেখেন তার চাকা পাংচার হয়ে গিয়েছে। কীভাবে বাড়ি ফিরবেন তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। ইতিমধ্যেই দু’জন যুবক তাঁর কাছে এসে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিছুক্ষণ কথাবার্তার পরেই রাজি হয়ে যান তরুণী। ওই যুবকেরা তাঁর স্কুটি নিয়ে যায়। ফিরে এসে জানায় স্কুটি সারানো সম্ভব হয়নি। তবে তরুণী চিকিৎসককে তারপরেও বাড়ি ফিরতে সাহায্য করার আশ্বাস দেয় ওই যুবকেরা। ঠিক সেই সময় ফোনে বোনের সঙ্গে কথা বলছিলেন তরুণী। তিনি জানান ভয় লাগছে। ইতিমধ্যেই আরও দু’জন যুবক টোলপ্লাজার কাছে জড়ো হয়। ওই চিকিৎসককে ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কের কাছে নির্জন এক স্থানে নিয়ে চলে যাওয়া হয়। সেখানেই চারজন মিলে ধর্ষণ করে তাঁকে। চিৎকার থামাতে মদ্যপান করানো হয়। অত্যাচারে মৃত্যু হয় নির্যাতিতার। লরিতে চড়িয়ে তাঁর দেহ অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। নম্বর প্লেট খুলে ফেলে দেওয়া হয় স্কুটির। পুলিশের দাবি, মৃত্যুর পর ওই লরিতেও তরুণীকে ধর্ষণ করে চার অভিযুক্ত। এরপর পেট্রল ঢেলে ব্রিজের নিচে পুড়িয়ে দেওয়া হয় নির্যাতিতাকে। পরেরদিন ব্রিজের নিচ থেকে গলায় থাকা গণেশের লকেট দেখে তরুণী চিকিৎসকের অগ্নিদগ্ধ দেহ শনাক্ত করেন পরিজনেরা।
গণধর্ষণের শিকার হয়ে ঘণ্টাখানেকের নৃশংস অত্যাচারে চলে গিয়েছে মেয়ে। আর কোনওভাবেই ফিরে আসবেন না তিনি। কঠিন হলেও বাস্তবকে মানতে হবে তা জানেন হায়দ্রাবাদের তরুণী পশু চিকিৎসকের মা, বাবা, বোন। এনকাউন্টারে চার অভিযুক্তের খতম হওয়ার ঘটনা যেন সেই ক্ষতেরই প্রলেপ। বিচার পেলেন বলেই দাবি নির্যাতিতার বাবার। পুলিশের ভূমিকায় খুশি নির্যাতিতার বোনও। দিদিকে ধর্ষণ করে যারা আগুনে পুড়িয়ে খুন করেছে তাদের এনকাউন্টারে খতম হওয়ার খবরে বেজায় খুশি চিকিৎসকের বোন। একই সুর তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মায়ের গলাতেও। নির্যাতিতার বাবা বলেন, “১০ দিন আগে আমার মেয়ে মারা গিয়েছে। পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই। এতদিনে আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পেল।”
প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দিল্লীর গণধর্ষিতা নির্ভয়ার মাও। তাঁর কথায়, “অন্তত একজন কন্যা সুবিচার পেল। আমি পুলিশকে ধন্যবাদ জানাব। অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে আমি ৭ বছর ধরে চিৎকার করে যাচ্ছি। বলছি, প্রয়োজনে সমাজের স্বার্থে আইন ভাঙুন। এখনও আদালতে চক্কর কেটে যাচ্ছি। আবারও একটা ১৩ ডিসেম্বর আসছে। আবার আদালতে যেতে হবে। তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মা নিশ্চয়ই খুব স্বস্তি পেয়েছেন। তাঁদের মেয়ে সুবিচার পেল। এমন নৃশংস অপরাধীরা এবার কিছুটা হলেও ভয় পাবে।”