বুধবার সকালেই মন্ত্রীসভার বৈঠক ডেকে তড়িঘড়ি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল(ক্যাব)-এ অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে মোদী সরকার। গতকাল সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ মন্ত্রীসভার বৈঠক বসে। ওই বৈঠকেই বিলের খসড়া পেশ করেন শাহ। পরে সরকারি সূত্রে জানানো হয়, প্রস্তাবিত সংশোধন বিলে অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে মন্ত্রীসভা। যার ফলে এবার সিঁদুরে মেঘ দেখছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাঙালিরা। সংসদে এই বিল পাশ হলে বাঙালিদের আরও সর্বনাশ হবে। হিন্দু বাঙালিরা পড়বেন আরও সমস্যায়। এমনটাই মনে করছে তাঁরা।
অভিযোগ, আদিবাসীদের মন জয় করতে গিয়ে অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়ে হিন্দু বাঙালিরাও খোয়াতে চলেছেন নাগরিকত্ব। এছাড়াও আসাম, ত্রিপুরা-সহ অন্যান্য জায়গাতেও আদিবাসী এলাকায় ক্যাব ‘রক্ষাকবচ’ কাজে লাগবে না হিন্দু বাঙালিদের। ক্যাবকে হিন্দু বাঙালিদের সঙ্গে ‘প্রতারণা’ বলতে শুরু করেছেন অনেকে। ক্যাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হতেই আসাম-সহ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতে শুরু হয়েছে ব্যাপক আন্দোলন।
বুধবার মন্ত্রিসভায় ক্যাব পাশ হওয়ার পর আসাম রাজ্য নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমন্বয় সমিতি (সিআরপিসিসি)–র চেয়ারম্যান তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন, ‘মোদী-শাহদের হাত ধরে হিন্দুস্থানে পরিণত হচ্ছে ভারত। এখানে বাঙালিদের থাকার কোনও জায়গা নেই। এখন এই জঘন্য, কদর্য বিষয়টি ওঁরা স্পষ্ট করে বলে দিলেই পারেন!’ তাঁর মতে, বাঙালিদের গর্জে ওঠা উচিত। হিন্দু বা মুসলিম বিচার না করে সমস্ত বাঙালিকে এক হয়ে গর্জে ওঠার ডাক দেন তিনি।
সূত্রের খবর, ইনার লাইন পারমিট বা সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত এলাকায় রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে না ক্যাব। ফলে উত্তর-পূর্ব ভারতের উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় হিন্দু বাঙালিদের নাগরিকত্ব নতুন করে প্রশ্নচিহ্নের মুখে। ত্রিপুরা বা আসামের আদিবাসী এলাকায় বহু বাঙালি দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। এমনকী, এ রাজ্যের দার্জিলিং বা ডুয়ার্সের বাঙালিরাও বিজেপির ক্যাবের হাত ধরে ‘বিদেশি’ হয়ে উঠতে পারেন বলেও অনেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বুধবার ক্যাব মন্ত্রীসভার অনুমোদন পাওয়ার পরই আন্দোলন তীব্রতর হয়েছে আসামে। গুয়াহাটির কটন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার কুশপুতুল পোড়ানো হয়। কালো পতাকা ঝুলিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভের পাশাপাশি পথ অবরোধে নামে ছাত্র সংগঠন আসু। অখিল গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতিও ঘোষণা করেছে, কিছুতেই ক্যাব মানা হবে না।
শুধু তাই নয়। সামাজিক গণমাধ্যমেও ক্যাব-বিরোধী ঝড় বইতে শুরু করেছে। বলা হচ্ছে, ‘অসমিয়াদের শত্রু হিমন্ত’। বুধবার গুয়াহাটিতে বিজেপির জোট শরিক অগপ সভাপতি অতুল বরার কুশপুতুলকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝোলানো হয়। সঙ্গে ছিল একটি ‘সুইসাইড নোট’। যাতে লেখা ছিল, ‘মন্ত্রিত্বের জন্য অসমের স্বার্থ বিজেপির কাছে বিকিয়ে দেওয়ার দায়ে আত্মহত্যা’। আসাম প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রিপুন বরার মতে, আসামের জন্য ‘কালো দিন’। ক্যাবের বিরুদ্ধে লড়াই চালাবে কংগ্রেস।