বুয়েনস আয়ার্সের সেই ছেলেটা তখন সদ্য পা রেখেছে বিশ্ব ফুটবলে। তখনও সে মহাতারকা হয়ে ওঠেনি। সেইসময়েই ডাচ কিংবদন্তি যোহান ক্রুয়েফ বলেছিলেন, ‘সব চেয়ে বেশি বার ব্যালন ডি’ওর জিতবে মেসিই। পাঁচ বার, ছ’বার, সাত বার।’ দেখা যাচ্ছে, কিংবদন্তি সেই তারকার ভবিষ্যৎবাণীই সত্যি হচ্ছে। ফুটবল মহলে ঘুরছে আর এক কিংবদন্তি রোনাল্ডিনহোর ২০০৬-এ ব্যালন ডি’ওর জয়ের পরে সেই প্রতিক্রিয়া, ‘এই পুরস্কারটা দেওয়া হয় বিশ্বসেরাকে। আমি তো বার্সেলোনাতেই সেরা নই।’ রোনাল্ডিনহো এবং মেসি সেইসময় একই সঙ্গে বার্সার হয়ে খেলছেন। ব্রাজিলীয় মহাতারকা তাই বয়সে অনেক ছোট সতীর্থের থেকে নিজেকে এগিয়ে রাখতে সংকোচবোধ করেছিলেন।
২০০৯ থেকে শুরু করে ২০১২ পর্যন্ত টানা চার বার। মাঝে ২০১৫ এবং সর্বশেষ ২০১৯। টানা ৬ বার ব্যালন ডি’ওর জিতেছেন তিনি। প্যারিসে সোমবার মেসির নামটা ঘোষণা হওয়ার মধ্যে বিশেষ বিস্ময় ছিল না। সবাই ধরেই নিয়েছিলেন, গত মরসুমে বার্সাকে লা লিগা চ্যাম্পিয়ন করা মহাতারকা ট্রফিটা জিতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে (পাঁচ বার এই পুরস্কার পেয়েছেন) ছাপিয়ে যাচ্ছেন। আপ্লুত মেসির প্রতিক্রিয়াতে হয়তো সেই জন্যই বিরাট কিছু বিস্ময় ছিল না, ‘দশ বছর আগে প্রথম ব্যালন ডি’ওর পেয়েছিলাম। তখন আমাকে চালনা করত আমার তিন ভাই। আজ ছ’নম্বর ট্রফিটা হাতে নিয়ে মনে হচ্ছে, এখন আমার প্রেরণা আমার স্ত্রী এবং বাচ্চারা। আন্তোনেল্লা তো একটা কথাই শুধু বলে যায়। জীবনে কখনও স্বপ্ন দেখতে ভুলবে না।’
বলা হচ্ছিল, মেসির ব্যালন ডি’ওর জয়ে কাঁটা হতে পারেন লিভারপুলের ডাচ ডিফেন্ডার ভার্জিল ফান ডাইক। য়ুর্গেন ক্লপ, স্টিভন জেরারদের মতে, এই পুরস্কার পাওয়ার সব চেয়ে যোগ্য ফুটবলার মেসিই। সবার দেওয়া ভোট থেকে মেসি পেয়েছেন ৬৮৬ পয়েন্ট। ভার্জিল ৬৭৯। ডাচ ডিফেন্ডারের প্রতিক্রিয়া নেওয়া হলে হেসে ফেলেন, ‘ট্রফির লড়াইয়ে ছিল মেসির মতো অবিশ্বাস্য এক ফুটবলার। বুঝতেই পারছেন, আমাদের কাজটা কত কঠিন।’
অভিনন্দনের বন্যায় ভাসছেন আর্জেন্তিনীয় তারকাও। ব্রাজিলের সিনিয়র রোনাল্ডো থেকে ডেভিড বেকহ্যাম। কেউ বাদ যাননি। গ্যারি লিনেকার লিখেছেন, ‘ছ’বার মেসি ব্যালন ডি’ওর জিতল। অকল্পনীয় সংখ্যা! ওর ফুটবল আজও যা আনন্দ দিচ্ছে, তার তুলনা হয় না। তাই এই পুরস্কারটা অন্য কারও হতে পারে না।’
পুরস্কারের উদ্যোক্তা ফরাসি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেসি নিজে বলছেন, ‘ব্যক্তিগত এবং দলের সদস্য হিসেবে এই পুরস্কার আনন্দ দিয়েছে। যত বার মাঠে নামি, তত বার চেষ্টা করি আরও আরও ভাল খেলার। আরও ভাল খেলার ক্ষমতা যে আমার আছে, সেই বিশ্বাস কখনও হারাইনি। ব্যালন ডি’ওর-এর ট্রফিটা সব সময় আমার কাছে বিশেষ একটা ব্যাপার। কিন্তু এখনও আমার কাছে সব চেয়ে বড় সাফল্য দলগত কোনও ট্রফি।’