প্রথমে অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা ভেবেছিলেন, মেলাবেন তিনি মেলাবেন। তাই আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু মাস কয়েকের মধ্যেই বদলে গেছে ছবিটা। এখনকার অবস্থা দেখে মাথায় বাজ পড়ার জোগাড় তাঁদের। আসলে বাজেটের অঙ্ক কষার সময়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ধরে নিয়েছিলেন, চলতি অর্থবর্ষে বর্তমান বাজারদরের নিরিখে হিসেব করা জিডিপি ১১ শতাংশ হারে বাড়বে। কিন্তু অর্থবর্ষের ছ’মাস পেরোনোর পরে দেখা যাচ্ছে, ওই সময়ে তা বেড়েছে ৭ শতাংশ হারে। আর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সেই হার নেমে এসেছে ৬.১ শতাংশে। গত ১৭ বছরের মধ্যে যা সব চেয়ে কম।
অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের আশঙ্কা, এই নমিনাল জিডিপি ধাক্কা খাওয়ার মানে কর বাবদ আয় কমবে। তার ওপরে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টায় কর্পোরেট কর কমানোর সিদ্ধান্তে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি বাড়তে পারে ১.৪৫ লক্ষ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে লাগামছাড়া হতে পারে রাজকোষ ঘাটতি। এমনিতেই এপ্রিল-অক্টোবরে তা সারা বছরের লক্ষ্যকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রায় বেঁধে রাখতে খরচ ছাঁটাই করা ছাড়া উপায় থাকবে না কেন্দ্রের। কিন্তু বেসরকারি লগ্নী যেখানে মাথা তুলছে না, সেখানে আবার সরকারি ব্যয়ে কাঁটছাঁট করতে গিয়ে আরও ধাক্কা খেতে পারে চাহিদা। ফলে মাথায় হাত পড়েছে মন্ত্রকের কর্তাদের।
মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘কর বাবদ আয় কমে গিয়ে রাজকোষ ঘাটতি লাগামছাড়া হবে। যে ঘাটতি পূরণ করতে সরকারকে বাজার থেকে আরও ধার করতে হবে। এখন কেন্দ্র গড়ে প্রায় ৬.৫ শতাংশ সুদে ধার নেয়। অথচ বর্তমান বাজারদরে বৃদ্ধির হার তার থেকে কম হলে ঋণের বোঝা ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে। তখন খরচ ছাঁটাই ছাড়া উপায় থাকবে না।’ আর পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালে জিডিপিতে ঋণের অনুপাত ছিল ৬৬.৫৮ শতাংশ। যা ২০১৮ সালে বেড়ে হয়েছে ৬৮.৩ শতাংশ। আর এ বছর তা ৭০ শতাংশে পৌঁছতে পারে। উল্টো দিকে জিডিপিতে সরকারি খরচের অনুপাত ১৩.৩৭ শতাংশ থেকে কমে ১৩.০৬ শতাংশে নেমেছে।
অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) আর্থিক বৃদ্ধি আটকে ছিল ৫ শতাংশে। জুলাই-সেপ্টেম্বরে তা ৪.৫ শতাংশে নেমেছে। কিন্তু এই বৃদ্ধি মাপা হয় ২০১১-১২ সালের বাজারদরের ভিত্তিতে। বর্তমান বাজারদরের নিরিখে সারা বছরে নমিনাল জিডিপির ১১ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্য ছুঁতে গেলে অর্থবর্ষের বাকি ছ’মাসে তার হার হতে হবে ১৭ শতাংশ। যা কার্যত অসম্ভব। এই পরিসংখ্যানই আরও চিন্তায় ফেলেছে নর্থ ব্লককে। শুধু অর্থ মন্ত্রকের কর্তারাই নন।
প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের নতুন সদস্য, ক্রেডিট সুইসের অর্থনীতিবিদ নীলকণ্ঠ মিশ্রের মতে, এর জেরে কর আদায় কমবে। যা সামাল দিতে শুধু কেন্দ্র নয়, রাজ্যগুলিকেও খরচ ছাঁটাই করতে হবে। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, নমিনাল জিডিপি ধাক্কা খাওয়ার অর্থ, এত দিন যে ব্যবসায়িক প্রকল্প লাভজনক ছিল, তা আর থাকবে না। কীভাবে? যদিও লোকসভায় ঘাটতি লাগামছাড়া হওয়া নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে নির্মলা বলেন, ‘আমরা ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ঘাটতি ৪ শতাংশর নীচে রেখেছি। চলতি অর্থবর্ষে তার লক্ষ্য বাঁধা হয়েছে ৩.৩ শতাংশে। সংশোধিত হিসেবনিকেশের সময় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’