বহুদিন ধরেই জমেছিল অসন্তোষ। অবশেষে তা আর চেপে রাখতে না পেরে সর্বসমক্ষেই অমিত শাহকে সেই অসন্তোষের কথা বলে ফেলেছিলেন শিল্পপতি রাহুল বাজাজ। ভরা সভায় শাহর উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, আপনাদের বিরুদ্ধে বলতে লোকে ভয় পান। কেন এমন এক পরিবেশ হবে, যেখানে আপনারা ভুল কাজ করলেও প্রকাশ্যে সমালোচনা করা যাবে না? আমি ভুল হতে পারি, কিন্তু আপনারা সমালোচনা পছন্দ করবেন, এমন আত্মবিশ্বাস আমার নেই। বাজাজের এই মন্তব্যের পর কয়েক ঘণ্টা কাটতেই তাঁর সমালোচনা শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। তবে রবিবার রাহুল বাজাজের সুর শোনা গেল দেশের অন্যতম প্রধান মহিলা শিল্পপতি কিরণ শ মজুমদারের গলাতেও। তাঁর স্পষ্ট কথা, কেন্দ্রীয় সরকার যাঁদের সমর্থক বলে ভাবে, তাঁদের বাদ দিয়ে এ বার অন্যদের মতামত শোনা শুরু করুক।
কিরণ বলেন, ‘কেন্দ্র শিল্পমহলকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। আমরা ব্রাত্য। কিন্তু যে কোনও সমালোচনাকে দেশবিরোধী বা সরকারবিরোধী বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে কেন?’ শুধু তাই নয়। বায়োকন প্রধানের টুইট, ‘আশা করব, সরকার ভারতীয় শিল্পপতিদের সঙ্গে মিলে সমাধান খুঁজবে, পণ্যের ক্রয় ও আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়ানোর চেষ্টা করবে। আমরা এখনও অচ্ছুত হয়ে আছি। অর্থনীতি নিয়ে আমাদের কোনও সমালোচনা শুনতে চায় না সরকার।’ বাজাজের বক্তব্য সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বলেছিলেন, এতে জাতীয় স্বার্থে ধাক্কা লাগতে পারে। এখনও নিজের অবস্থানে অনড় নির্মলা। তাঁর যুক্তি, একান্তই ব্যক্তিগত ধ্যানধারণা প্রচার করার চেষ্টা করলে তা ‘জাতীয় স্বার্থে’ ধাক্কা দেবে।
তবে নির্মলার মন্তব্যের জবাবে কিরণ বলেছেন, ‘শিল্পমহল রাষ্ট্রবিরোধী নয়। সরকার-বিরোধীও নয়। আমরা চাই, দেশ দ্রুততম অর্থনীতি হিসেবে সাফল্যের চূড়োয় পৌঁছে যাক। আমি গর্বিত, অরাজনৈতিক নাগরিক। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের সমালোচনা নিয়মিত করেছি। শুধু চাই, সরকার কেন্দ্র ও রাজ্যে ভাল নীতি আনুক।’ অন্যদিকে, বাজাজের মন্তব্য প্রসঙ্গে লোকসভায় এনসিপি-নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে বলেছেন, ‘মুম্বইয়ের শেয়ার সূচক মনোভাবের উপরেই নির্ভর করে। যদি প্রথম সারির শিল্পপতিদের মনোভাব এমন হয়, তা হলে কী হাল হবে?’
জবাবে নির্মলার সাফাই, ‘আমরা মোটেই বলছি না যে প্রশ্ন করতে পারবেন না। আমার অর্থমন্ত্রী হিসেবে ছয় মাস হওয়ার আগেই আমাকে সবথেকে খারাপ অর্থমন্ত্রী বলা হয়েছে। আমি গোটা দেশে ঘুরে শিল্পমহলের সঙ্গে কথা বলেছি। বলেছি, নতুন পরামর্শ দিন। এই সরকার, তার প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই সমালোচনা শুনেছে।’ বাজাজ ভয়ের প্রসঙ্গ তোলার পর অমিত বলেছিলেন, যে ভয়ের কারণ নেই। তারপরেও যদি এমন মনোভাব থাকে, পরিস্থিতি উন্নতির চেষ্টা করা হবে। কিরণের মতে, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অভয় দেওয়ার পরও শাসক পক্ষের নেতা-মন্ত্রীরা বাজাজের সমালোচনা করছেন। এটা ঠিক নয়। বাজাজ যে শিল্পমহলের ভয়ের কথাটা বলতে পেরেছেন, তাতে আমরা হাঁফ ছেড়েছি।’