ঝাড়খণ্ডে ভোট প্রচারে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নির্দিষ্ট করে বলে দিয়েছেন, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগেই গোটা দেশের জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি) তৈরি করে প্রত্যেক অনুপ্রবেশকারী বিদেশিকে তাড়ানো হবে। আর এখনও পর্যন্ত পাওয়া ইঙ্গিত অনুযায়ী সেই লক্ষ্যেই আগামী সপ্তাহের গোড়ায় সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনতে চলেছে কেন্দ্র। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এবার কোমড় বাঁধছে তৃণমূল। জানা গেছে, লোকসভা বা রাজ্যসভা যে কক্ষেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনা হোক না কেন, তার বিরোধিতা করার জন্য প্রস্তুত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
প্রসঙ্গত, এই সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল বা সিএবির মাধ্যমে মুসলিম বাদে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান-সহ কয়েকটি দেশ থেকে আসা হিন্দু, পার্সি, জৈন, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ‘শরণার্থীদের’ ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। হিন্দু শরণার্থীদের যে কোনও কাগজপত্র দেখাতে হবে না, সে কথাও বারবার বলছেন শাহ। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, বিলটি সংসদে এলে পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলা হবে যে এনআরসি-তে ধর্মের ভিত্তিতে তালিকা করা হয়নি ঠিকই, কিন্তু তাতে যে সব হিন্দুর নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের দেশে রাখার জন্যই সিএবি আনা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এটি ধর্মের ভিত্তিতে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার কৌশল বলে চিহ্নিত করে আগেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় যৌথ কমিটিতে চিঠি লিখেছিলেন তৃণমূলের লোকসভার সাংসদ সৌগত রায় এবং রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও ব্রায়েন। তাতে বলা হয়েছিল, এনআরসি-র ফলে যে ৪০ লক্ষ মানুষের নাগরিকত্ব সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে, তাঁদের মধ্যে ২৮ লক্ষ বাঙালি হিন্দু। ১০ লক্ষ বাঙালি মুসলিম। সিএবি হলে ওই ২৮ লক্ষ বাঙালি হিন্দু নিজেদের শরণার্থী বলে আবেদন করতে বাধ্য হবেন। আর ১০ লাখ বাঙালি মুসলিমকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে।
সৌগতর কথায়, ‘অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষরা সুবিধা পেলে কেন মুসলিমরা এর বাইরে থাকবেন? কমিটিতে এই বিলটি আলোচনা করে দেখা যাচ্ছে, সুচিন্তিত ভাবে বিজেপি বিভেদকামী পরিকল্পনা চরিতার্থ করতে চাইছে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করাই এই বিলের মূল উদ্দেশ্য। সে জন্য এই বিল খারিজের দাবি তুলবে তৃণমূল।’ রাজ্যের শাসক দলের দাবি, সিএবির বাস্তবায়ন হলে বাংলায় সংখ্যালঘু সমাজে বড় ধরনের অসন্তোষ তৈরি হবে। হিন্দুদের অনেকেই নাগরিকত্ব খুইয়ে শরণার্থীদের খাতায় নাম লেখাতে বাধ্য হবেন।