গত সপ্তাহের বুধবারই তিনি টুইট করে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই যে এনআরসি হবেই। এবং তা গোটা দেশেই হবে।’ আর এবার ঝাড়খণ্ডে ভোট প্রচারে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একেবারে নির্দিষ্ট করেই বলে দিলেন, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগেই গোটা দেশের জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি) তৈরি করে প্রত্যেক অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করা হবে। ভোটের আগেই সব অনুপ্রবেশকারী বিদেশিকে তাড়ানো হবে দেশ থেকে।
শুধু তাই নয়। বিদেশি তকমা দিয়ে বিতাড়নের এই উদ্যোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের জন্য প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকেও তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন শাহ। রাহুলের উদ্দেশ্যে তাঁর প্রশ্ন, ‘অনুপ্রবেশকারীরা কি আপনার খুড়তুতো ভাই?’ আসলে বিদেশি আখ্যা দিয়ে দেশ থেকে মানুষ তাড়ানোর প্রশ্নে কিছু মানবিক প্রশ্ন তুলেছেন রাহুল। এ জন্য চক্রধরপুর ও বহরাগোড়ার সভা থেকে শাহর কটাক্ষ, ‘রাহুলবাবা বলেন, ওদের তাড়াবেন না। ওরা কোথায় যাবে? কী খাবে? কেন তাড়াব না? ওরা কি আপনার খুড়তুতো ভাই?’ এরই সঙ্গে তাঁর হুঙ্কার, ‘আপনারা নিশ্চিত থাকুন ২০২৪-এর ভোটের আগে সব অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, সারা দেশে এনআরসির ভাবনা নিয়ে গোড়া থেকেই তীব্র বিরোধিতা করে যাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি মমতার আপত্তি খারিজ করে তাঁর যুক্তিগুলি কার্যত উপেক্ষা করে চলার বার্তা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মমতার প্রশ্ন, স্বাধীনতার পর থেকে দেশে এত দিন যাঁরা ভোট দিলেন, সরকার গড়লেন, তাঁদের কেন নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে? কিন্তু শাহ সাফ জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রী বা তৃণমূল নেত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কোনও অবস্থান নিতে পারেন, তাতে সারা দেশে এনআরসি তৈরির কাজ আটকে থাকবে না। এটা হবেই।
প্রসঙ্গত, বাংলা দখলের লক্ষ্যে আসামে এনআরসির কাজ চলার সময় থেকেই বিজেপি বলতে শুরু করেছিল, এবার এ রাজ্যেও এনআরসি হবে। কিন্তু দলের নেতারাই এখন মানছেন, এর জন্যই ধাক্কা খেতে হয়েছে রাজ্যের তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে। নিজেদের জেতা আসনও খোয়াতে হয়েছে তাঁদের। কিন্তু এতেও দমছেন না বিজেপি সভাপতি। ফের একবার অনুপ্রবেশকারীদের(মুসলিম) সম্পর্কে সরকারের কড়া অবস্থানের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন তিনি। তবে শাহের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘এ সব ওঁদের রাজনৈতিক স্লোগান। আমাদের রাজ্যে কী হবে, বা হবে না, সেটা মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।’