বহুদিন ধরেই জমেছে বিতৃষ্ণা। অবশেষে তা আর চেপে রাখতে না পেরে সর্বসমক্ষেই অমিত শাহকে সেই বিতৃষ্ণার কথা বলে ফেলেছিলেন অশীতিপর শিল্পপতি। ভরা সভায় বসে তাঁকে অভয় দিয়েছিলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টা ঘাটতেই দেশের অন্যতম শিল্পপতি রাহুল বাজাজের তীব্র সমালোচনা শুরু করে দিল শাহের দল বিজেপি!
উল্লেখ্য, ঠিক এই আশঙ্কার কথাই গতকাল মুম্বইয়ের এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন বাজাজ। বলেছিলেন, শিল্পমহলের আশঙ্কার কথা তারা নিজেরা শোনাতে পারছে না। খোদ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও গত শুক্রবার বলেছিলেন, শিল্পমহল আতঙ্কে রয়েছে। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সামনে পেয়ে গত কাল রাতে সেই প্রশ্নটিই করে ফেলেন বাজাজ গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান।
অনুষ্ঠানের মঞ্চে বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এবং অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের মাঝখানে বসা অমিত শাহের উদ্দেশ্যে বাজাজ প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনাদের বিরুদ্ধে বলতে লোকে ভয় পান। কেন এমন এক পরিবেশ হবে, যেখানে আপনারা ভাল কাজ করলেও প্রকাশ্যে সমালোচনা করা যাবে না? আমি ভুল হতে পারি, কিন্তু আপনারা সমালোচনা পছন্দ করবেন, এমন আত্মবিশ্বাস আমার নেই।’
প্রশ্ন করার সময় বাজাজের পিছনেই বসেছিলেন অমিত শাহের পুত্র জয় শাহ। বাজাজের প্রশ্নে অমিত শাহ হাসিমুখেই জবাব দেন, ‘আপনার প্রশ্নের পরে কেউ মানবেন না যে, কেউ ভয় পান। আমাদের বিরুদ্ধেই সব থেকে বেশি লেখা হচ্ছে। পরিবেশের সংশোধন করতে হবে। তবে ভয় পাওয়ার কোনও দরকার নেই। কেউ ভয় পাওয়াতে চায় না। না এমন কিছু করা হয়েছে, যা বললে সরকারের চিন্তার কারণ আছে।’
কিন্তু শাহের এই অভয়বাণীর পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটল না, আসরে নেমে পড়েছেন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা। প্রবীণ শিল্পপতিকে বিঁধে নির্মলা সীতারামনের বক্তব্য, উত্তর চাওয়ার বদলে আকর্ষণ পেতে এভাবে নিজের মনোভাব প্রকাশ জাতীয় স্বার্থকে আঘাত করতে পারে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ পুরীও বজাজকে আক্রমণ করেছেন।
আবার দলের ইঙ্গিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় নেমে পড়েছেন বিজেপির তথ্য-প্রযুক্তি মোর্চার প্রধান অমিত মালব্য। খুঁজে বার করেছেন রাহুল বাজাজের পুরনো ভিডিও, তাঁর সম্পর্কে নথিপত্র। গতকাল অমিত শাহকে প্রশ্ন করার সময় বাণিজ্যমন্ত্রীর নাম করে রাহুল বজাজ দাবি করেছিলেন, পীযূষ গোয়েল জানেন, তিনি সব সময় সকলের সমালোচনা করে এসেছেন। কারও প্রশংসা করা ধাতে নেই।
কিন্তু বিজেপি সামনে এনেছে এমন একটি ভিডিও, যেখানে এক বণিকসভার অনুষ্ঠানে রাহুল গান্ধীর বক্তৃতার পরে রাহুল বাজাজ বলছেন, ‘যতক্ষণ না কেউ অসাধারণ হন, ততক্ষণ কারও প্রশংসা করতে দ্বিধা করি। কিন্তু আজ বলব, ওঁর (রাহুল গান্ধীর) শরীরী ভাষা, আবেগে আমি বেশ মুগ্ধ।’
বিজেপির খোঁচা, ‘রাহুল বাজাজের পক্ষে কারও প্রশংসা করা কঠিন। অবশ্যই রাহুল গান্ধী তার ব্যতিক্রম।’ সেই সঙ্গে এ-ও বলা হয়েছে, ‘ভয়ের পরিবেশের মতো অর্থহীন কথার আড়ালে লুকোবেন না, নিজের রাজনৈতিক যোগটি স্পষ্ট করুন।’ বিজেপির বক্তব্য, রাহুল গান্ধীর প্রতি তাঁর এত প্রশস্তি বোঝায়, লাইসেন্স-রাজের সময় বেড়ে ওঠা শিল্পপতিদের আনুগত্য সব সময় কংগ্রেসের দিকেই থাকবে।
নিজেদের বক্তব্যকে জোরালো করতে বিজেপি আজ আইআইএম-আহমেদাবাদের একটি ‘কেস-স্টাডি’ও সামনে এনেছে। যেখানে বলা হয়েছে, বাজাজ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে সংস্থার চুক্তি করেছেন। শুধু তাই নয়। বিজেপি আরও কয়েক জন শিল্পপতির বক্তব্য নেট-দুনিয়ায় ছড়িয়েছে, যাঁরা বজাজের ভিন্ন সুরে কথা বলেছেন।
তবে চুপ না থেকে বিজেপির আক্রমণের জবাবে মুখ খুলেছেন শিল্পপতি কিরণ মজুমদার শ। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক নীতির সমালোচনা করে টুইটারে তাঁর বক্তব্য, সরকারের উচিত চাহিদা ও বৃদ্ধি বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া। কিন্তু সরকার অর্থনীতি নিয়ে কোনও সমালোচনাই শুনতে নারাজ।
অন্যদিকে, বিজেপিকে বিঁধে কংগ্রেসের পবন খেরা বলেছেন, ‘সমালোচনা সহ্য করতে না পারাটাই বিজেপির সমস্যা। ইউপিএ জমানায় সকলে খোলাখুলি সরকারের সমালোচনা করতেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ খোলাখুলি প্রশ্ন নিতেন সাংবাদিকদের কাছ থেকে। অথচ পাঁচ বছরের বেশি কাটিয়ে দেওয়ার পরেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটিও সাংবাদিক সম্মেলন করলেন না!’