আগামী ৫ বছরের মধ্যে ভারতের অর্থনীতিকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার বুলি আউড়িয়ে দেশবাসীকে স্বপ্নের ফানুসে চড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এক বছর পেরনোর আগেই ফুটো হয়ে গিয়েছে সেই রংচঙে ফানুস। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধি আরও ধাক্কা খেতে চলেছে আন্দাজ করে শুক্রবারের শেয়ার বাজার নেমেছিল আগেই। সেনসেক্স ৩৩৬.৩৬ পড়ে দাঁড়ায় ৪০,৭৯৩.৮১ অঙ্কে। পরে পরিসংখ্যান বেরোতে দেখা গেল, সমস্ত জল্পনাকে সত্যি করে জিডিপি বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৪.৫ শতাংশে।
বাজার বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রথম ত্রৈমাসিকের বৃদ্ধি ৫ শতাংশ হওয়ার পরেই প্রশ্ন উঠেছিল এই সঙ্কট মন্দার রূপ নেবে না তো? এ বার তা ৪.৫ শতাংশ ছোঁয়ায় সেই উদ্বেগ আরও বেড়েছে। শিল্প মহলের অনেকে বলছেন, কেন্দ্র যতই পরিস্থিতি আয়ত্তে থাকার দাবি করুক, কার্যত খাদের মুখে অর্থনীতি। তাদের প্রশ্ন, আর কত নামবে বৃদ্ধি? কারখানায় যে উৎপাদন বাড়ছে না, তা স্পষ্ট। তা হলে কী করে চাকরি হবে! কী করে চাহিদা বাড়বে? চাহিদা না বাড়লে লগ্নী করবে কেন সংস্থা?
অন্যদিকে, মহারাষ্ট্রের মসনদ হারানোর শোক সামলে ওঠার আগেই এ রাজ্যের তিন উপনির্বাচনে ভরাডুবির পর বিজেপি যখন দুরু দুরু বুকে শনিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া পাঁচ দফায় ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে, তখন মোদী-শাহের রক্তচাপ আরও কয়েকমাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে, ৬ বছরে সর্বনিম্ন হওয়া এই জিডিপি বৃদ্ধির হার। মোদী সরকারের আরও যন্ত্রণার কারণ, অনেক দাওয়াই দিয়েও গত দেড় বছর ধরে ক্রমশ ঝিমিয়ে আসা অর্থনীতিকে কিছুতেই চাঙ্গা করা যাচ্ছে না।
শিল্প বিনিয়োগ এবং ক্রেতা চাহিদা বাড়িয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক টানা পাঁচ দফায় সুদের হার ১.৩৫ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়েছে। কিন্তু, বাজারে না ফিরেছে চাহিদা না বেড়েছে শিল্প লগ্নী। আগস্ট মাস থেকে কর্পোরেট সংস্থাগুলির জন্য আয়কর ৮ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন একাধিক ব্যবস্থা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু, অর্থনীতিতে তার কোনও কার্যকরি প্রভাব এখনও দেখা যায়নি।
বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, ক্রেতা চাহিদার অভাবে দেশের কলকারখানাগুলি তাদের উৎপাদন ক্ষমতার ৮০ শতাংশেরও কম বর্তমানে ব্যবহার করছে। ফলে, ক্রেতা চাহিদা না ফিরলে নতুন লগ্নী করে উৎপাদন ক্ষমতার সম্প্রসারণের কোনও অর্থই হয় না। পরিবর্তে, এই করছাড়কে কর্পোরেট সংস্থাগুলি আপাতত নিজেদের মুনাফা বাড়ানোর কাজেই ব্যবহার করছে।
ভারত চেম্বারের সভাপতি সীতারাম শর্মা বলছেন, কেন্দ্র ব্যবস্থা না নিলে দেশকে মন্দার হাত থেকে বাঁচানো কঠিন। তাঁর দাবি, ‘আর্থিক হাল ফেরানোর কোনও ব্যবস্থাই ফল দেয়নি। চাহিদা বাড়ানোর ব্যবস্থা চাই।’ আবার ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি কমল পারেখের মতে, ‘দেশের আর্থিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছে।’ অনেকেরই আশঙ্কা, বৃদ্ধির হার আর যদি না-ও কমে, তবু বছর দুয়েকের মধ্যে তার মাথা তোলার সম্ভাবনা কম।