বিজেপি’র কি ঘর ভাঙার সময় হয়েছে? যেসব শরিকদের ওপর ভরসা করে তারা ভারতের ৭০ শতাংশ স্থানেই আধিপত্য গড়েছিল, সেই দুর্গ ক্রমশ ভঙ্গুর হচ্ছে। নামতে নামতে এখন ৪০ শতাংশে ঠেকেছে। যদিও এখনই বিজেপি-কে হালকাভাবে নেওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই বিরোধীদের মধ্য। কিন্তু জল যেদিকে গড়াচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে হাওয়া প্রতিকূলেই বইতে পারে বিজেপি-র। ইঙ্গিত সর্বপ্রথম মিলেছে মহারাষ্ট্রে। এবার তেমন ইঙ্গিত মিলছে বিহারেও।
জানা যাচ্ছে, বিহারে বিজেপির শরিকসঙ্গী নীতিশ কুমারের জেডিইউ-র সঙ্গে তলে তলে যোগাযোগ রাখছে লালু প্রসাদের আরজেডি। আর এই পরিকল্পনা চলছে বিজেপি-কে ক্ষমতাচ্যুত করতেই! ২০২০ সালে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে এহেন ধাক্কায় দিতে চলেছেন নীতিশ কুমার। এমন বিস্ফোরক দাবি করেছেন আরজেডির নেতা রঘুবংশ প্রসাদ সিং।
২০১৫ বিধানসভায় আরজেডি-র সঙ্গেই জোট করে বিহারে ক্ষমতায় আসেন নীতিশ কুমার। কিন্তু দু’বছরের মধ্যেই ঘুরে যান। প্রথমে জোট ভাঙেন, এরপর বিজেপি-র সঙ্গে জোট করে নেন। একে পিছন থেকে ছুরি মারা বলে আখ্যা দেন লালু প্রসাদ। কিন্তু, তারপর থেকেই নানা ইস্যুতে বিজেপি-র সঙ্গে মতপার্থক্য প্রকাশ্যে এসেছে জেডিইউ প্রধানের। আসন সমঝোতা থেকে সকল ইস্যুতেই অমিত শাহের সঙ্গে বনিবনা হয়নি খুব একটা। অনেক তৈলমর্দন করে জোট টিকিয়ে রেখেছিলেন অমিত। কিন্তু লোকসভা ভোটের পর একটাও মন্ত্রক দেওয়া হয়নি বিহারের কোনও মন্ত্রীকে। এতে বেজায় ক্ষেপে যান নীতিশ। সেখান থেকেই সম্পর্কের পারদ ফের নীচের দিকে নামতে শুরু করে। তাই বিজেপি-র সঙ্গেও জেডিইউর দূরত্ব তৈরি হওয়া কেবল সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করা হচ্ছে।
এত কিছু সত্ত্বেও নীতিশ কোনও পদক্ষেপ নিতে পারছেন না কারণ নিজের গর্ত নিজেই খুঁড়ে রেখেছেন তিনি। এই মুহূর্তে বিজেপিতে হারাতে গেলে আরজেডির সঙ্গে জোট করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই নীতিশের। যাদেরকে ফেলে দিয়েই বিজেপি সঙ্গে জোট তিনি করেছিলেন। তারা আদৌ হাত বাড়িয়ে জেডিইউকে স্বাগত জানাবে কিনা সেটা নিয়ে বড় সন্দেহ রয়েই যাচ্ছে। এই জল্পনা উস্কে দিয়ে রঘুবংশ প্রসাদ সিং বলেছেন, ‘যদি অ-বিজেপি শক্তিগুলি কাছাকাছি এসে যায় তবে এনডিএ-কে হারানো কোনও ব্যাপার না বিহারে। তাই বিজেপিকে হারাতে জেডিইউ ও আরজেডি যদি আবার জোট করে তবে কেউ অবাক হবেন না যেন।’
আপাতত সম্পর্ক খারাপ হলেও এর পিছনে কারণ কেবল একটাই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, নীতিশ কুমারের মতো সুযোগসন্ধানী রাজনীতিক এই ভূ-ভারতে খুব কম আছেন। তিনি যদি বুঝতে পারেন হাওয়া বিজেপি-র দিকে নেই, তবে জোট ভেঙে দিতে একদিনও সময় নেবেন না। আর আরজেডি-কে নিয়ে নীতিশের খুব একটা বাধ-বিচার কখনই ছিল না। ফলে যদি সত্যিই বিধানসভা ভোটের আগে জোট হয়, তবে বিজেপির চিন্তা বাড়বে বহুগুণ।