তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ভরাডুবির ফলে জামানত বাজেয়াপ্ত হল বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থীদের। লোকসভা ভোটে বাম-কংগ্রসে জোট না হলেও উপনির্বাচনে জোটপ্রার্থীরা সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনও প্রভাবই ফেলতে পারেননি। তিনটি কেন্দ্রেই তাঁদের প্রার্থীদের জামানত জব্দ হয়েছে। এদিকে ভোট কমেছে বিজেপিরও। বিজেপির সবথেকে বেশি ভোট কমেছে খড়গপুরে। লোকসভা ভোটের তুলনায় সেখানে ভোট কমেছে ২৪ শতাংশ। পাশাপাশি কালিয়াগঞ্জে ৯ শতাংশ এবং করিমপুরে ২ শতাংশ ভোট কমেছে বিজেপির। অন্যদিকে, এনআরসি ইস্যু, কেন্দ্রের অর্থনীতি এবং লোকসভা ভোটে ধাক্কা খাওয়ার পর জনসংযোগ বৃদ্ধিই তৃণমূলের ভোট বাড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
সাত মাস আগে লোকসভা ভোটে বিজেপি খড়গপুর সদর বিধানসভা কেন্দ্রে পেয়েছিল ৫৮ শতাংশ ভোট। তৃণমূল সেখানে পেয়েছিল মাত্র ৩০ শতাংশ ভোট। এটি বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। তিনি এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ৪৫ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতেছিলেন। সেই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে এবার ৩৩.৯৮ অর্থাৎ ৩৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে বিজেপি। অর্থাৎ লোকসভা ভোটের তুলনায় এখানে বিজেপির ভোট কমেছে ২৪ শতাংশ। অথচ এই কেন্দ্রেই তৃণমূল উপনির্বাচনে পেয়েছে ৪৭.৬৬ শতাংশ ভোট। গত লোকসভা ভোটের তুলনায় তৃণমূল কংগ্রেস প্রায় ১৮ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছে। গত তিন বছরে বিজেপির গড় বলে পরিচিত খড়গপুরে বিজেপির ভোটের হার মারাত্মক কমে গিয়েছে। যা রাজ্য-রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করবে বলেও মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
গত লোকসভা ভোটে বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট হয়নি। খড়গপুর সদর বিধানসভা কেন্দ্রে গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছিলেন ৫.১৪ শতাংশ ভোট। আর সিপিএম প্রার্থী পেয়েছিলেন ৫.০৬ শতাংশ। এবার যৌথভাবে জোট গড়ে লড়াই করেছিল সিপিএম ও কংগ্রেস। বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী পেলেন ১৪.৮৩ শতাংশ ভোট। জোট গড়ে গত লোকসভা ভোটের তুলনায় ভোট বাড়লেও জোটপ্রার্থী জামানত রক্ষা করতে পারেননি। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ভোটের ১৬.৬৬ শতাংশ ভোট পেলেই জামানত রক্ষা হয়। তাও পায়নি তাঁরা।
জানা গেছে, গত বিধানসভা ভোটের তুলনায় তাঁদের ভোট কমেছে ২১ থেকে ৪৫ শতাংশ। লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় কালিয়াগঞ্জ-করিমপুরে জোটের ভোট কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। শুধুমাত্র খড়গপুরে হাত-হাতুড়ির ঝুলিতে বাড়তি ৫ শতাংশ ভোট। এনআরসি আতঙ্কে ভোটারদের একটা অংশ তৃণমূলের ওপরই ভরসা রাখায় আরও রক্তক্ষরণ বাড়ল বাম-কংগ্রেসের।
অন্যদিকে, সীমান্তবর্তী দুই বিধানসভা আসন কালিয়াগঞ্জ ও করিমপুর। সেই দুই কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট যথাক্রমে ২১ ও ৩৪ শতাংশ। সেখানেও বাজিমাত করেছে তৃণমূল। উপনির্বাচনের ফল বলছে, লোকসভা নির্বাচনের তুলনায়, কালিয়াগঞ্জে বাম-কংগ্রেসের ভোট কমেছে ৮ শতাংশ। বিজেপির ভোট কমেছে ৯ শতাংশ। আর তৃণমূলে ভোট বেড়েছে ঠিক এই দুয়ের যোগফল ১৭ শতাংশ। বিধানসভা ভোটের তুলনায় উপনির্বাচনে বাম ও কংগ্রেসের ভোট কমেছে প্রায় ৪৫ শতাংশ।