চলতি মাসেই সুপ্রিমকোর্ট অযোধ্যা মামলায় ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিল৷ ওই রায় অনুসারে অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির হবে৷ পাশপাশি বাবরি মসজিদের জন্য ৫ একর জমি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত৷তবে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে মেনে নিতে পারেনি মুসলিম সম্প্রদায়ের বেশ কিছু মানুষ, যার ফলে তারা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন নাসিরুদ্দিন শাহ, শাবানা আজমি-সহ ১০০ জন মুসলিম ব্যক্তিত্ব। তাঁরা মনে করেন, যতদিন রাম জন্মভূমি ও বাবরি মসজিদের মামলা বেঁচে থাকবে, ততদিন মুসলমান সম্প্রদায়ের আরও ক্ষতি হবে। পুনর্বিবেচনার আবেদন দায়েরের বিরোধিতা করে মুসলিম সম্প্রদায়ের যে সমস্ত ব্যক্তিত্ব হস্তাক্ষর করেছেন, তাঁদের মধ্যে মুসলিম বিদ্বান, সমাজ সেবক, উকিল, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, কবি, অভিনেতা, চলচ্চিত্র নির্দেশক, থিয়েটার জগতের শিল্পী, সংগীত পরিচালক ও বিদ্যার্থীরা আছেন। এই রায় ‘ত্রুটিপূর্ণ’ হলেও শুধুমাত্র সমাজের শান্তি বজায় রাখতে তা তাঁরা মেনে নিচ্ছেন।
অভিনেতা শাবানা আজমি, নাসিরউদ্দিন শাহ, সাংবাদিক জাভেদ আনন্দ-সহ ইসলামি গবেষক, ব্যবসায়ী, কবি, থিয়েটার ও সঙ্গীতশিল্পী মিলিয়ে প্রায় ১০০ জনের তরফে সোমবার একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, ‘সিদ্ধান্তে পৌঁছতে আইনের চেয়ে বিশ্বাসকেই প্রাধান্য দিয়েছে আদালত। তা নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়, সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং ধর্ম নিরপেক্ষ সংগঠনগুলির অসন্তোষ বুঝতে পারছি আমরা। আদালতের রায় ত্রুটিপূর্ণ মানছি আমরা। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস, এই বিবাদ জিইয়ে রেখে কোনও লাভ নেই। এতে ভারতীয় মুসলিমদেরই ক্ষতি হবে।’ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য সুপ্রিমকোর্টের এই রায় মেনে নেওয়া উচিত বলে তাঁরা মুসলিম সমাজের কাছে আবেদন করেছেন৷
মন্দির-মসজিদ বিবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকলে, তাতে সঙ্ঘ পরিবারেরই সুবিধা হবে বলেও দাবি করা হয় ওই বিবৃতিতে। তাতে বলা হয়, ‘সব কিছু পিছনে ফেলে মুসলিমদের এগিয়ে যেতে বলছেন কেউ কেউ। কিন্তু আমাদের আর্জি, মন্দির-মসজিদ বিবাদ ছেড়ে বেরিয়ে আসুন আপনারা। অন্যথায় সঙ্ঘ পরিবারের ধর্ম নিরপেক্ষ গণতন্ত্রকে হটিয়ে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য চাপা পড়ে যাবে। আমাদের বিশ্বাস, এই বিবাদ টেনে নিয়ে গেলে মুসলিম বিদ্বেষ বাড়বে। ইসলাম ভীতি তৈরি হবে, যা সাম্প্রদায়িক বিভাজনে মদত জোগাবে।’
অযোধ্যা মামলার ঐতিহাসিক রায় দানের সময় সুপ্রিম কোর্ট বিবাদিক ২.৭৭ একর জমিতে রামমন্দির গড়ে তোলার রায় দিয়েছে। পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ মসজিদ বানানোর জন্য সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি প্রদানের রায় দিয়েছে। প্রসঙ্গত, এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে না পারায় অল ইন্ডিয়া পার্সোনাল ল বোর্ড এবং জমিয়ত উলেমা-এ-হিন্দ (আরশাদ মদনী গুট) ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছেন।