ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে বহু রাজনৈতিক দলের সহাবস্থান। তাই বহু মত পার্থক্য আছে। তবে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ও সৌজন্যতা বোধের খাতিরে একতা বজায় রাখা বাঞ্চনীয়। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় সরকারের। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে এই সৌজন্যতাটুকুও দেখানোর কোনো লক্ষণ দেখা গেল না মোদী সরকারের কোনো মন্ত্রী বা আমলাদের মধ্যে। বিদেশ কূটনৈতিক নীতিতে কোনো বিদেশের শীর্ষ স্থানীয় মন্ত্রী দেশে এলে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত থাকতে হয় দেশের শীর্ষ স্থানীয় মন্ত্রীদের বা ক্যাবিনেট সদস্যর। তবে এইবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনও মন্ত্রী, এমনকি শীর্ষ আমলাকেও পাঠানো হয়নি। তাহলে মোদী সরকার নূন্যতম সৌজন্যতার পাঠটাও ভুলতে বসেছেন?
তবে কেন এমন উদাসীনতা প্রদর্শন, সে বিষয়ে সরকারি ভাবে মুখ খুলতে চাইছে না সাউথ ব্লক। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ঘরোয়া রাজনীতির বাধ্যবাধকতাই কারণ। এক দিকে তাঁরা যখন দেশজুড়ে এনআরসি করে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের দেশছাড়া করার কথা বলছেন, সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে পরিচিত এনআরসি-বিরোধী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতেই চেয়েছেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা। কিন্তু সিনিয়র কোনও আমলাকেও কেন কলকাতায় পাঠায়নি মোদী সরকার, তা নিয়ে চুপ সাউথ ব্লকের কর্তারা। সব মিলিয়ে দিল্লীরর এই আচরণে প্রতিবেশী বলয়ে ভারতের অস্বস্তি যে আরও বেড়ে গেল, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই কূটনীতিকদের।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, বিভিন্ন মঞ্চে এ কথা বার বার বলেছেন খোদ মোদী। পাকিস্তান সীমান্তের ওপার থেকে আসা জঙ্গিপনায় ভারত যখন চাপে, সেই সময় হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাস উৎখাত করবেন। সে কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবেশীদের মধ্যে একমাত্র ঢাকাকেই বিভিন্ন চড়াই উতরাইয়ে পাশে পেয়েছে দিল্লি। সম্প্রতি ভারতের অনুরোধে ঢাকা তাদের দেশের ভিতর দিয়ে অসম-ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহণের জন্য ‘ফি’ এক ধাক্কায় টন প্রতি ১০৫৪ টাকা থেকে কমিয়ে করেছে ১৯২ টাকায়। এমন ‘পরম মিত্রের’ ভারত সফরে দিল্লীর এই উদাসীনতা কেন, সে প্রশ্ন উঠেছে।