শুরু হয়ে গেছে শীতের মরশুম। আর শীত মানেই রুক্ষ্ম চুলের সমস্যায় জেরবার হয় সকলেই। খুশকির সমস্যা তো আছেই তার সঙ্গে আছে আরও নান সমস্যা। অথচ শীতকাল মানেই বিভিন্ন রকম স্টাইল নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার পালা। তাই শীত শুরুর মুখেই যাবতীয় সমস্যাকে সরিয়ে দেওয়া উচিৎ। তবে তার সাথে অবশ্যই বজায় রাখতে হবে রোজকার রুটিন মাফিক পরিচর্যা।
প্রাকৃতিক কারণেই এই মরসুমে চুলে অভাব হয় ময়শ্চরাইজ়ারের। চুলে আর্দ্রতা হারানোর পাশাপাশি ড্রায়ারের ব্যবহার বা হেয়ার ট্রিটমেন্টের কারণে সমস্যা আরও বাড়ে। ফলে চুল হয় শুষ্ক। রুক্ষতা বাড়ে, চুল উসকোখুশকো দেখায়। স্ক্যাল্প ড্রাই হয়ে যায় বলে, খুসকির সমস্যা তো শীতকালে ভীষণ ভাবে মাথাচাড়া দেয়। এই সমস্যার সমাধান করে হেয়ার মাস্ক, তাই মাস্ক ব্যবহারের আগে দেখে নেওয়া প্রয়োজন, কী কারণে আপনি মাস্ক ব্যবহার করতে চান। সব সমস্যার সমাধান যে একই হবে, তা কিন্তু নয়।
হেয়ার প্যাকের গুণ হচ্ছে, মাত্র কুড়ি মিনিটে এই মিশ্রণ চুলে যে পুষ্টি জোগাবে, তাতে একাধারে কন্ডিশনিং হবে, ঔজ্জ্বল্য আসবে, চুল থাকবে হাইড্রেটেড এবং দৈর্ঘ্যও বাড়বে। আর এর জন্য সালঁয় গিয়ে আপনাকে বাড়তি টাকা গুনতেও হবে না। তাই চুলের শীতকালীন সমস্যা যদি কোনও রোগ বা ওষুধের কারণে না হয়ে থাকে, তা হলে হেয়ার মাস্কের পরম যত্ন আস্তরণের মতো এমন ভাবে বসে থাকবে যে, তা ভেদ করে শীত চুলে কামড় বসাতে পারবে না।
চুল পড়ার সমস্যায় ব্যবহার করতে পারেন নিম্নলিখিত উপায়গুলি
১ এক টেবিল চামচ নারকেল তেল ও এক টেবিল চামচ মধু একটি পাত্রে নিয়ে ভাল করে মেশান। তার পরে তা গরম করে চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত ভাল করে মাখিয়ে, পুরো চুল ঢেকে রাখুন শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে। পরে ভাল করে ধুয়ে নিন।
২ নারকেল তেল ও দারচিনি গুঁড়ো— দু’টি উপাদানই এক টেবিল চামচ করে মিশিয়ে নিন। মাঝখান দিয়ে সিঁথি করে চুল দু’ভাগ করে নিন। চুলের মাঝখান থেকে নীচ অবধি প্যাক লাগান। আঙুলের ডগা দিয়ে স্ক্যাল্পে ভাল করে মাসাজ করুন। তার পরে পুরো চুল তুলে মাথায় শাওয়ার ক্যাপ বা তোয়ালে জড়িয়ে রাখুন। ৩০-৪৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন। সপ্তাহে একদিন যে কোনও প্যাক লাগাতে পারেন।
শুষ্ক চুলের জন্য অলিভ অয়েল খুব উপকারী। কারণ শুষ্ক চুলের ন্যাচারাল কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে এটি। ফলে স্ক্যাল্পের ড্রাইনেসও কমে। একটি পাত্রে দু’টেবিল চামচ ব্রাউন সুগার ও এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল নিয়ে ভাল করে মেশান। তার পরে চুলের গোড়া থেকে ডগা অবধি ভাল করে মেখে মিনিট কুড়ি রেখে দিন। পরে শ্যাম্পু করে নিন। চটজলদি গ্লো আনতে এই প্যাকের জুড়ি নেই।
খুশকি চুলের গোড়া আলগা করে দেয়, ফলে দ্রুত চুল পড়তে শুরু করে। রূপ বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ মানুষের অকালে চুল ঝড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ এই খুশকি। খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম এমনকি পেটের সমস্যার থেকেও খুশকি হতে পারে। তাই ব্যবহার করা যেতেই পারে ঘরোয়া কিছু উপায়
১। খুশকির অব্যর্থ ওষুধ হল লেবু। একটা গোটা পাতিলেবুর রস মাথায় মেখে নিন ভালো করে। তিরিশ মিনিট রেখে ভাল করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। লেবুতে থাকা অ্যাসিড চুলে প্রবেশ করে তা খুশকি বিনাশ করে।
২। মেথি বাটা, আমলকির রস, ডিম ও টক দই একসঙ্গে জলের সঙ্গে ফেটিয়ে মাথায় মাখুন। সপ্তাহে দু’-তিন দিন এই প্যাক লাগিয়ে আধ ঘণ্টা রেখে দিন। তার পর তা ধুয়ে ফেলুন। শুধু যে খুশকি কমবে তাই নয়, সঙ্গে সঙ্গে ফিরবে চুলের হারানো জেল্লা।
৩। টক দই, পাকা কলা এবং মধু দিয়ে একটা প্যাক তৈরি করে মাথায় লাগিয়ে রাখুন এক ঘণ্টা। তারপর ধুয়ে নিন। সপ্তাহে এক-দু’বার ব্যবহারে খুশকি কমে যায় তাছাড়া কলা চুলকে নরম করে তোলে।
৪।জলের সঙ্গে তেঁতুল গুলে নিন। এ বার তা মাথার গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন। কিছু ক্ষণ রাখার পর ধুয়ে দিন। সহজেই সারবে খুশকির সমস্যা।
৫।জবা ফুলের রস, আমলকির রস এসব চুলের পক্ষে খুব ভাল। চুলের ত্বককে আর্দ্র করার পাশাপাশি চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে ও চুল ঘন করতেও কাজে আসে । খুশকি সরাতেও আস্থা রাখুন এই প্রাকৃতিক উপাদানে। জবা ফুল ও আমলকি একসঙ্গে বেটে লাগান চুলে। খুশকি সারাতে এই প্যাক অব্যর্থ কাজে আসে।
৬। বেকিং সোডাও খুশকি সারাতে খুব উপকারি। প্রথমে জল দিয়ে চুল ভিজিয়ে নিন। তারপর এক চামচ বেকিং সোডা নিয়ে পুরো মাথায় মেখে রাখুন এক ঘণ্টা তারপর ধুয়ে ফেলুন।
শীত ইতিমধ্যেই দরজায় কড়া নাড়ছে। তাই আর দেরি না করে শুরু করুন চুলের যত্ন। সৌন্দর্যের আসল কথা কিন্তু চুলই বলে।