কেন্দ্রে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেই বল্গাহীন আর্থিক উদারীকরণের নীতি নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় বিজেপি সরকার। কেন্দ্রের ফাঁকা রাজকোষে অর্থের যোগান অব্যহত রাখতে একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যেই সামনে এল আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। মোট ২৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার স্ট্যাটিজিক অংশিদারিত্ব বিক্রির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে কেন্দ্র। এই তালিকায় আছে এয়ার ইন্ডিয়ার নাম। সোমবার এমনই জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। এবার এক ধাক্কায় ৫ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত নিল মোদী সরকার।
বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভারত পেট্রোলিয়াম (বিপিসিএল), কনটেনার কর্পোরেশন (কনকর), শিপিং কর্পোরেশন, নিপকো ও টিহরি জল বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম (টিএইচডিসিএল)— এই পাঁচটি সংস্থার শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনটি সংস্থার নিয়ন্ত্রণ আর সরকারের হাতে থাকবে না। বাকি দু’টির ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হবে অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার হাতে।
পাশাপাশি ৭৫টি জাতীয় সড়ক প্রকল্পও বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। এক বছর আগে চালু হওয়া সড়ক প্রকল্পও এর মধ্যে থাকবে।
একবিংশ শতকের শুরুতে অটল বিহারী বাজপেয়ী জমানা থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের পথ প্রশস্থ হয়। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এটি সবথেকে বড় বিলগ্নিকরণের ঘটনা।
এখানেই শেষ নয়, ভবিষ্যতে আরও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণের পথ প্রশস্ত করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আর্থিক বিষয়ক কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় সরকারের অংশীদারি ৫১ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনা হবে। নীতি আয়োগ আগেই বিলগ্নিকরণের জন্য ২৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বাছাই করেছে। সংস্থার নিয়ন্ত্রণ সরকারি হাতে রাখা হবে কি না, তা আলাদা ভাবে ঠিক হবে।
অর্থনীতিবিদদের প্রশ্ন, আজ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেচে কোষাগারে টাকা আসতে পারে। আগামিকাল কী হবে? বিশেষত বিপিসিএলের মতো লাভজনক সংস্থা বেচে দেওয়াকে, সংসার চালাতে সোনা বেচে দেওয়া হিসেবেই দেখছেন বিরোধী নেতারা।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আগেই জানিয়েছিলেন, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ভারত পেট্রলিয়াম, এয়ার ইন্ডিয়া, বেঙ্গল কেমিক্যাল বেসরকারির হাতে তুলে দেওয়া হবে। চলতি আর্থিক বছরে যে পরিমান অর্থ রাজকোষে আসার কথা, তার অনেক কম পরিমান অর্থ রাজকোষে জমা পড়েছে এখনও পর্যন্ত। তাতেই বেশ বিপাকে মোদী সরকার। পাশাপাশি স্লথ গতি দেখা গিয়েছে শিল্প উৎপাদনেও। কারখানাগুলিতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই আর্থিক ঘাটতি সামাল দিতে বিলগ্নিকরণের পথই বেছে নিচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
গোটা দেশেই শিল্প উৎপাদনের হাল বেহাল। গত সেপ্টেম্বর মাসে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধির হার ৪.৩ শতাংশ হ্রাস হয়েছে। ২০১২ সালের এপ্রিলের পরে এই প্রথম দেশের শিল্প ক্ষেত্রের এমন হাল হল। শুধু তাই নয়, এই নিয়ে পরপর দু-মাস শিল্প উৎপাদনের ঊর্ধ্বগতি ধাক্কা খেল। আগস্ট মাসে শিল্প উৎপাদনে সূচক ১.১ শতাংশ কমে গিয়েছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪.৬ শতাংশ হারে কলকারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছিল। ফলে দেশের আর্থিক অবস্থা নিয়ে চূড়ান্ত বিপাকে মোদী সরকার।