গতকাল নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে আজকের এবং আগামীর পুরুষদের উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ভগবান’ শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। তাঁর মূল বার্তা- পুরুষের চোখে জল বেমানান নয়। বরং অশ্রুই বের করে আনে সেরাটা। যন্ত্রণা লুকিয়ে হাসির মধ্যে নয়, লোনা জল সর্বসমক্ষে আনার মধ্যে রয়েছে সাহসীর শংসাপত্র।
কী এমন লিখেছেন শচীন? চিঠির একেবারে শেষে তাঁর বার্তা, ‘অশ্রু দেখানোয় লজ্জার কিছু নেই। যে অংশ মজবুত করে, তাকে লুকিয়ে রাখা কেন? কেন অশ্রু লুকিয়ে রাখা? নিজের যন্ত্রণা ও দুর্বলতা দেখাতে বিপুল সাহসের প্রয়োজন হয়। কিন্তু নিশ্চিত ভাবেই সকাল যেমন হয়, তেমনই তোমরা সেই যন্ত্রণা থেকে আরও মজবুত হয়ে বেরিয়ে আসবে। পুরুষ কী করতে পারে বা পারে না- সেই প্রচলিত ধারণা ভেঙে বেরিয়ে আসতে উৎসাহ দেব। তোমরা যে-ই হও, যেখানেই থাক, তোমরা এই সাহসটুকু পাও।’
এই উপলব্ধি শচীনের এসেছে নিজের জীবন থেকে। ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন তিনি। সেদিনের কথা লিখতে ফিয়ে তিনি বলেছেন, সে যেন জীবনসঙ্গীটির সঙ্গে চিরবিচ্ছেদের বয়ান- ‘প্রতিটি পদক্ষেপে সে (যন্ত্রণা) বুকে চেপে বসতে থাকল। সব শেষ হচ্ছে। গলার কাছে একটা দলা পাকিয়ে উঠছে। সেই মুহূর্তে মাথার মধ্যে সব ভাবনা তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। না, ধরে রাখতে পারিনি। জোরও করিনি। দুনিয়ার সামনে তাকে মেলে দিয়েছিলাম। আশ্চর্য, শান্তির ঠিকানা যেন পেতে থাকলাম। মনের সেই জোর এল। যা পেয়েছি, তার প্রতি কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠলাম। বিশ্বাস করলাম, আমি প্রকৃতই পুরুষ।’
শচীনের বার্তা শুরু হয়েছে দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে- ‘তোমরা কেউ বাবা হবে, কেউ স্বামী। ভাই বা বন্ধু। মেন্টর বা শিক্ষক। তোমরা নিজেদের উদারণ দিয়ে নেতৃত্ব দেবে। তোমরা হবে নির্ভীক এবং শক্তিশালী। সাহসী ও প্রাণবন্ত। ভয়, সংশয় বা তীব্র হতাশার মুখোমুখিও হতে হবে তোমাদের। সংশয়াতীত ভাবে এমন সময়ও আসবে যখন তোমরা ব্যর্থ হবে। মনে হবে কেঁদে সব যন্ত্রণা বের করে দিই।’
‘পুরুষ’ শব্দের প্রচলিত সংজ্ঞায় যে এই ‘ক্যাথারসিস’ ধাক্কা খাবে, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন শচীন। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চিত থাক, তোমরা অশ্রু চেপে নিজেদের মজবুত দেখাবে। কারণ, সেটাই তো পুরুষ করে! কারণ, পুরুষ কাঁদতে পারে না- সেটা বিশ্বাস করিয়েই আমাদের বড় করা হয়েছে। কান্না পুরুষকে দুর্বল করে।’ শচীন নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছেন, এই ধারণার গণ্ডিতে তাঁরও বেড়ে ওঠা। আর সেটা যে ভুল, তা অনুধাবন করেই তাঁর এই খোলা চিঠি।