গত সপ্তাহেই উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তবে সেই সময় প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আছড়ে পড়ে দক্ষিণবঙ্গে। তাই বাধ্য হয়ে উত্তরবঙ্গ সফর বাতিল করেছিলেন তিনি। তবে বুলবুলের প্রকোপ কাটতেই সোমবার একদিনের ঝটিকা সফরে কোচবিহারে এসে এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের কর্মীসভায় নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করার পাশাপাশি বেশ কিছুটা সময় কাটালেন কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী রাসমেলায়। অতি নিষ্ঠা ভরে পুজো দিলেন কোচবিহারের প্রাণের দেবতা মদনমোহন মন্দিরে। তার সঙ্গে অঞ্জলি তো দিলেনই, অংশ নিলেন সন্ধ্যা আরতিতেও।
প্রসঙ্গত, অতীতে বহুবারই মদনমোহন মন্দির দর্শন করতে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু রাসমেলা চলাকালীন তিনি এই প্রথম মদনমোহন মন্দিরে পা রাখলেন। এ সময় আসতে পেরে উচ্ছ্বসিত মুখ্যমন্ত্রী নিজেও। মন্দির থেকে বেরিয়ে রাসমেলার অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমি যতবারই কোচবিহারে আসি, তখনই মদনমোহন মন্দিরে আসি। কিন্তু আজকের অঞ্জলি আমার খুব ভাল লেগেছে।’ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, তাঁর বন্দ্যোপাধ্যায় পদবি দেখে মন্দিরের পুরোহিত শাণ্ডিল্য গোত্রে পুজো দিচ্ছিলেন। তখন মুখ্যমন্ত্রীই তাঁকে অনুরোধ করেন, মা মাটি মানুষ গোত্রে পুজো দিতে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ বলে কথা। সে কথা ফেলতে পারেননি রাজ পুরোহিত।
বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ কোচবিহারের নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের সভা শেষ হতেই মুখ্যমন্ত্রী সোজা চলে আসেন মদনমোহন মন্দিরে। আগে থেকেই সেখানে অপেক্ষা করছিলেন মন্দিরের পুরোহিত। মূল দরজা দিয়েই মদনমোহন মন্দিরে প্রবেশ করেন তিনি। মন্দিরের মাঝখানে সবচেয়ে বড় ঘরটিতে অধিষ্ঠিত রয়েছেন স্বয়ং মদনমোহন। তার পাশের ঘরে শ্বেতপাথরের মহাকাল মূর্তির উপর কষ্টিপাথরের একটি কালীমূর্তি আছে। সেই বিগ্রহের নাম আনন্দময়ী কালী। বাম পাশের ঘরে অষ্টধাতুর জয়তারা, অন্নপূর্ণা, কাত্যায়নী ও মঙ্গলচণ্ডীর মূর্তি রয়েছে। তার কিছুটা দূরেই মন্দির প্রাঙ্গণের পূর্ব দিকে আছে মা ভবানীর মন্দির। উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এই মন্দিরের প্রধান প্রবেশদ্বারটি রয়েছে দক্ষিণে। তার উপরে রয়েছে নহবতখানা।
সেই নহবতখানা দিয়েই মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে আসেন মদনমোহনের গর্ভগৃহে। পুরোহিত মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ও মাথায় পবিত্র জল ছিটিয়ে দেন। মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয় পুষ্পার্ঘ্য। সঙ্গে ছিলেন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা। দু’জনেই মদনমোহনের কাছে অঞ্জলি দেন। পুরোহিত মুখ্যমন্ত্রীর কপালে পরিয়ে দেন চন্দনের টিপ। মুখ্যমন্ত্রীর মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদও করেন। মুখ্যমন্ত্রীও পুরোহিতের পা ছুঁয়ে নমস্কার করেন। এরপর যান পাশের কালীমন্দিরে। সেখান থেকে ফের মদনমোহনের সামনে ফিরে আসেন। মুখ্যমন্ত্রীকে সাক্ষী রেখেই সন্ধ্যা আরতি শুরু হয় একসঙ্গে তিনটি মন্দিরে। বেজে ওঠে বাদ্যযন্ত্র। আর সেই আবহেই মদনমোহনের সামনে একাগ্র চিত্তে দাঁড়িয়ে থাকেন মমতা।