‘তোমার দেখা নাই রে, তোমার দেখা নাই’- সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনে বিরোধীদের জন্য এই গানই ছিল একেবারে উপযুক্ত। কেন? কারণ, সোমবার সকালে নিয়মমাফিক অধিবেশন শুরুর আগে সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, ‘গত অধিবেশনে কাজ অভূতপূর্ব হয়েছে। এ বারেও হবে আশা করি।’ কিন্তু শেষ অবধি যখন অধিবেশন শুরু হল, তখন তাঁর টিকিটিরও দেখা মিলল না। বিরোধী নেতা-নেত্রীরা প্রায় সকলেই খুঁজলেন হঠাতই ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়া নরেন্দ্র মোদীকে। শুধু মোদী কেন, ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ থেকে শুরু করে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর-সহ মোদী মন্ত্রীসভার প্রায় সব হেভিওয়েট মন্ত্রীই।
প্রসঙ্গত, প্রয়াত অরুণ জেটলির স্মরণে গতকাল রাজ্যসভা কয়েক ঘণ্টার জন্য মুলতুবি থাকলেও লোকসভায় কাজ হয়েছে পুরোদমে। অথচ শাসক শিবিরের প্রথম সারি ছিল একেবারে ফাঁকা! তবে বিদেশে থাকা রাজনাথ ছাড়া বাকি সকলেই কিন্তু সংসদ ভবনে এসেছিলেন। নিজের নিজের ঘরে বৈঠকও করছিলেন। কিন্তু লোকসভায় আসেননি। লোকসভায় তা হলে কী হল? কংগ্রেস-এনসিপি-ডিএমকে-তৃণমূলের মতো বিরোধীরা একজোট হয়ে নানা বিষয় নিয়ে সরব হল। ‘নতুন’ বিরোধী শিবসেনাও একটু দূরত্ব বজায় রেখে হইচই করল। শিবসেনা যদিও ওয়েলে নামেনি, তবে প্রথম এক ঘণ্টায় প্রশ্নোত্তর পর্বের গোটাটাই ওয়েলে ছিলেন বাকি বিরোধীরা। এক ঘণ্টা পর স্পিকার ওম বিড়লা বলেন, তিনি শুনবেন বিরোধীদের কথা।
কংগ্রেসের তরফে প্রথমেই প্রশ্ন তোলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী নেই কেন?’ তার পরেই ওঠে কাশ্মীর থেকে ফারুক আবদুল্লার অনুপস্থিতির কথা। হাত শিবিরের প্রশ্ন, গত অধিবেশনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ফারুক বন্দী নন। তা হলে ১০৮ দিন পর এখনও কেন বন্দী তিনি? সংসদে নেই কেন?’ সামাল দিতে স্পিকার বলেন, ‘সেই সময়ে ছিলেন না। কিন্তু এখন বন্দী।’ এরপর ফের চেপে ধরে বিরোধীরা। প্রশ্ন ওঠে, জনৈক ‘ম্যাডি শর্মা’ যদি ইউরোপের সাংসদদের নিয়ে কাশ্মীর ঘুরতে পারেন, ভারতের সাংসদেরা পারবেন না কেন? বিজেপির দিকে আঙুল তুলে কংগ্রেসের তরফে বলা হয়, ‘এটা আপনাদেরও অপমান নয়? আপনারা বলেন, জম্মু-কাশ্মীর অভ্যন্তরীণ বিষয়। আপনারাই তো তাকে আন্তর্জাতিক করছেন!’
এরপর তৃণমূলের সৌগত রায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিএমকের টি আর বালুরাও ফারুকের প্রসঙ্গ তুলে মোদী সরকারকে বিঁধতে থাকেন। মুর্শিদাবাদের শ্রমিক থেকে জওয়ানদের হত্যা নিয়েও সরব হয় বিরোধীরা। তবে প্রশ্নের পর প্রশ্ন জমতে থাকলেও জবাব দেওয়ার জন্য গতকাল একবারের জন্যেও এলেন না মোদী-শাহদের। যা দেখে ক্ষুব্ধ বিরোধীদের তরফে প্রশ্ন উঠল, প্রধানমন্ত্রী গরহাজির কেন? প্রথম সারির মন্ত্রীরাও কেন বিরোধীদের মুখোমুখি হলেন না? পরিস্থিতি সামাল দিতে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী যদিও বলেন, ‘অনেক ক্যাবিনেট মন্ত্রীই তো উপস্থিত ছিলেন। দায়িত্ব তো সামগ্রিক।’ তবে তাতে যে চিড়ে ভেজেনি, তা বিরোধীদের হইচই দেখেই স্পষ্ট।