গত সপ্তাহেই উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তবে সেই সময় প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আছড়ে পড়ে দক্ষিণবঙ্গে। তাই বাধ্য হয়ে উত্তরবঙ্গ সফর বাতিল করেছিলেন তিনি। তবে বুলবুলের প্রকোপ কাটতেই সোমবার কোচবিহারে পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখানে দাঁড়িয়েই রাজ্যে তিন কেন্দ্রে বিধানসভা উপনির্বাচনের ঠিক আগে ফের একযোগে বিজেপি-কংগ্রেস ও সিপিএমকে নিশানা করলেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কথায়, দিল্লিতে একে অপরের বিরুদ্ধে ভাষণ দেয়, আর এ রাজ্যে একসঙ্গে কাজ করে। এই তিন দলকেই ভোটের মাধ্যমে এ রাজ্য থেকে তাড়াতে হবে।
যতদিন যাচ্ছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সমস্যা যে কোচবিহারের সংগঠনের উপর কুপ্রভাব ফেলছে, তা কানে পৌঁছেছে তৃণমূল সুপ্রিমোর। তাই এদিন কোচবিহারে দলীয় সভায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে সুর চড়িয়ে দলের মধ্যে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলবে না বলে নেতা-কর্মীদের হুঁশিয়ারি দেন মমতা। কোচবিহারের তৃণমূল পুরপ্রধান ভূষণ সিংহকেও প্রকাশ্যেই এ নিয়ে ভর্ৎসনা করেন মমতা। তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘তৃণমূলে কোনও নেতা নেই। তৃণমূলের একটাই গোষ্ঠী। একটাই নেতা জোড়া ফুল।’ তৃণমূল নেত্রীর কথায়, আলো নিয়ে মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে ঝগড়া বরদাস্ত করা হবে না। মন্ত্রী ও পুরপ্রধানকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন মমতা। জানিয়ে দেন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রভাবে যেন দল না ভোগে।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের পাশাপাশি লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়েও সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির নিশীথ প্রামাণিকের কাছে পরাজিত হয়েছেন তৃণমূলের পরেশ অধিকারী। তবে এর জন্য দলীয় নেতৃত্বের দুর্বলতা রয়েছে বলে মনে করেন না তিনি। বরং বিজেপির বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার অভিযোগে সরব হয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গে যথেষ্ট উন্নয়ন করেও এই হার তাঁকে দুঃখ দিয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে অপপ্রচার আর টাকার কাছে মাথা নত করেছে মানুষ। কেউ ভাবতেও পারেনি রাতের অন্ধকারে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে অপারেশন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সহায়তায় বর্ডার দিয়ে আসা টাকা বিলি করে ভোট কেনা হয়েছে।
এদিনের সভা থেকে একাধিক ইস্যুতে বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এনআরসি নিয়ে তোপ দেগে তিনি বলেন, এনআরসি নিয়ে বিভাজনের খেলা হচ্ছে, এটা আসলে বিজেপির ‘খুড়োর কল’। তাঁর কথায়, ‘এনআরসি খুড়োর কল। এনআরসি নিয়ে অহেতুক রাজনীতি হচ্ছে। কুৎসা করে টাকা ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। ভয় দেখান হচ্ছে। এক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অন্য সম্প্রদায়ের ঝগড়া লাগান হচ্ছে।’ এর পাশাপাশি, রেল, এয়ার ইন্ডিয়া সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ নিয়ে কেন্দ্রের মোদী সরকারের প্রবল সমালোচনা করেন মমতা। বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেসের গোপন বোঝাপড়ার রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তৃণমূল নেত্রী।