দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মাসকয়েক আগেই আসামে প্রকাশিত হয়েছে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা। যাতে বাদ গেছে, ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের নাম। একসঙ্গে এত মানুষকে ‘নিজভূমে পরবাসী’ হতে দেখে আতঙ্ক এবং সেইসঙ্গে ক্ষোভ বাড়ছে এ রাজ্যেও। আগুনে ঘি ঢালছে বিজেপি নেতাদের ক্রমাগত হুঁশিয়ারি, যে বাংলাতেও এনআরসি হবে। ফলে বাংলায় ক্রমশই আলগা হচ্ছে গেরুয়া শিবিরের পায়ের তলার মাটি। তাই প্রচার করা হচ্ছে ঠিকই। তবে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে আদৌ এনআরসির ইস্যু তুলে ধরা হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে বিজেপি।
দলের শীর্ষ সূত্রে জানা যাচ্ছে, রাজ্যের আসন্ন তিন বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলাফল দেখার পরেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। কারণ এনআরসি এজেন্ডাকে বাংলার মানুষ কতটা খোলামনে গ্রহণ করেছেন, তার কিছু আঁচ পশ্চিমবঙ্গের তিনটি বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলাফলেই পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। যদি দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট ভোটে বিজেপির ফলাফল সন্তোজনক হয়নি, তাহলে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে এনআরসি ইস্যু থেকে সরেও আসতে পারে গেরুয়া শিবির। এমনটাই জানা গিয়েছে বিজেপি সূত্রে।
প্রসঙ্গত, আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরেই বিজেপি নেতারা দাবি করছেন, এবার বাংলাতেও এনআরসি হবে। রাজ্যে বিভিন্ন কর্মসূচীতে যোগ দিতে এসে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা তো বটেই, সম্প্রতি দিল্লীতে এসে বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা লোকসভার সংসদ সদস্য দিলীপ ঘোষও দাবি করেছেন, বাংলায় যে এনআরসি হবে, তাতে অন্তত ২ কোটি মানুষের নাম বাদ পড়বে। দিলীপের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে তুমুল জল্পনারও সৃষ্টি হয়েছিল। এনআরসি নিয়ে বিজেপির এই হইচই করাকে বাংলার মানুষ কীভাবে নিচ্ছেন, এবার সেটাই সরাসরি বুঝতে চাইছেন অমিত শাহ। কারণ এনআরসি নিয়ে বাংলার মানুষের মধ্যে যদি বিন্দুমাত্র সংশয় বা ভীতি থাকে, তাহলে তার প্রভাব উল্লিখিত তিন বিধানসভা উপনির্বাচনের ভোটবাক্সে পড়বে বলেই মনে করছে বিজেপি।
উল্লেখ্য, আগামী ২৫ নভেম্বর রাজ্যের খড়্গপুর সদর, কালিয়াগঞ্জ এবং করিমপুর এই তিনটি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন রয়েছে। ভোট গণনা ও ফলপ্রকাশ হবে আগামী ২৮ নভেম্বর। বিধানসভা ভোটের নির্বাচনী প্রচার চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে আপাতত ২৮ নভেম্বরের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন বিজেপি নেতারা। বিজেপির অন্দরের খবর, খড়্গপুর সদর সেভাবে না হলেও কালিয়াগঞ্জ এবং করিমপুরের মানুষদের একটি বড় অংশ দেশভাগের সময় অথবা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় এ পারে চলে আসতে কার্যত বাধ্য হয়েছিলেন। এনআরসির ইস্যুটি তাঁরা কীভাবে নিয়েছেন, তা নিয়ে বিশেষ নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না বিজেপি নেতারা। এবং সেই কারণেই তাঁরা প্রধানত ভরসা করে রয়েছেন উপনির্বাচনের ফলাফলের উপরই।