গত ৫ আগস্ট সংসদে জম্মু ও কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিল ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে বিল পাশ করিয়ে কাশ্মীর থেকে লাদাখকে বিচ্ছিন্ন করে দু’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করার ঘোষণা করেন তিনি। অবশেষে ৩১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে জম্মু-কাশ্মীর। তবে নভেম্বরের গোড়াতেই প্রবল তুষারপাতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় উপত্যকার পরিস্থিতি সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে প্রশাসন। বাজারে মিলছে না মোমবাতি, এলপিজি কয়েলও। সব মিলিয়ে ঠান্ডার প্রকোপে নাজেহাল কাশ্মীরবাসী।
প্রসঙ্গত, বুধবার থেকে তুষারপাত শুরু হয় কাশ্মীরে। তার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর উপরে। বারামুলায় উপড়ে যায় বিদ্যুতের খুঁটি। ওই এলাকায় প্রায় ৬ ফুট পুরু বরফ জমেছে। গত কয়েক দিন ধরে প্রায় জনা চল্লিশ শ্রমিক কাজ করেও বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরাতে পারেনি। ফলে প্রবল ঠান্ডা ও বিদ্যুতের অভাবে কাহিল হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। সন্ধ্যায় বাড়িতে মোমবাতি জ্বালিয়ে কিছুটা আলো-তাপ পাওয়ার কথা ভেবেছিলেন তাঁরা। কিন্তু বাজারে মোমবাতি, এলপিজি কয়েলেরও আকাল। কারণ, নিষেধাজ্ঞার কাশ্মীরে এখনও নতুন রসদ সংগ্রহ করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া নভেম্বরের শুরুতেই এমন তুষারপাতের পূর্বাভাসও দেয়নি আবহাওয়া দফতর।
স্থানীয়দের দাবি, প্রথম দু’তিন দিন পরিস্থিতি সামলাতে প্রশাসনের তরফে তেমন কোনও পদক্ষেপই চোখে পড়েনি। ফলে উত্তর ও দক্ষিণ কাশ্মীরের বড় অংশ বিদ্যুৎহীন হয়ে যায়। খাস শ্রীনগরে মাত্র ৪০ শতাংশ বাসিন্দার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। আর এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, শীতে ঘর গরম রাখার জন্য কাশ্মীরিরা যে পাত্রে আগুন জ্বালিয়ে রাখেন, সেই কাংরিও এখনও বাজারে আসেনি। খানিয়ার এলাকার বাসিন্দা শেখ ইরান বললেন, ‘কাশ্মীরে বুখারি নামে এক ধরনের হিটারের চল আছে। সেটাও পাওয়া যাচ্ছে না। কয়লার দোকানও বন্ধ।’ এই পরিস্থিতিতে উপত্যকায় বাড়ছে জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ। হাসপাতালে এমন সব উপসর্গ নিয়ে লাইন দিচ্ছেন রোগীরা।
তার উপরে উপত্যকার সঙ্গে বাকি দেশের যোগাযোগের অন্যতম পথ জম্মু-শ্রীনগর সড়কও গত কাল থেকে ধসের ফলে বন্ধ। ফলে সবমিলিয়ে প্রবল ঠান্ডার মধ্যে শোনা যাচ্ছে প্রবল ক্ষোভের সুরও। নিশানায় নয়া কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীরের প্রশাসন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দার কথায়, ‘আগে তুষারপাত আর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে স্থানীয় প্রশাসনকে সরাসরি জানাতাম আমরা। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বা মেহবুবা মুফতির উদ্দেশেও কড়া মন্তব্য করতেন অনেকে। কিন্তু এখন প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানোর রাস্তাও বন্ধ।’