মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই কেন্দ্রীয় নীতির জেরে দেশের অর্থনীতিতে গভীর মন্দা ও নীতি-পঙ্গুত্ব দেখা দিয়েছে। একদিকে যেমন শিল্পে খরা। নগদ টাকার জোগান নেই। মুখ থুবড়ে পড়েছে ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধি (জিডিপি)। ঠিক তেমনই ক্ষুধা সূচকে আরও তলানিতে পৌঁছচ্ছে ভারত। খিদের জ্বালায় মাটি খেয়ে মৃত্যু হচ্ছে শিশুর। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এরই মধ্যে দেশে হু-হু করে বেড়েছে অতিধনী শিল্পপতিদের সংখ্যা।
হ্যাঁ, অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা সত্যি করে দেশে ভয়াবহ আকারে বাড়ছে বৈষম্য। ধনীরা আরও বড়লোক হচ্ছেন, আর একটু একটু করে দারিদ্রের সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছেন দেশের সিংহভাগ গরিব মানুষ। এবার অক্সফামের সাম্প্রতিক রিপোর্টেও সেই মাত্রাছাড়া বৈষম্যেরই বিপজ্জনক ইঙ্গিত। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের শীর্ষ ৯ বিলিয়নিয়ারের (১ বিলিয়ন= ১০০ কোটি) মিলিত সম্পদের পরিমাণ দেশের তলার দিকের ৫০ শতাংশ জনসংখ্যার মিলিত সম্পদের পরিমাণের সমান। ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ভারতে প্রতিদিন ৭০ জন নতুন ডলার মিলিওনিয়ার তৈরি হবে, এমন কথাও বলছে দ্য দাভোস রিপোর্ট ২০১৯ ‘পাবলিক গুড অর প্রাইভেট ওয়েলথ?’
অক্সফামের আগের রিপোর্টেও দেশে বৈষম্য বাড়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। এবারের রিপোর্টে সেই ইঙ্গিত দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের জনসংখ্যায় আর্থিক দিক দিয়ে শুরুর প্রথম ১০ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে দেশের সামগ্রিক সম্পদের ৭৭.৪ শতাংশ। চমকে দেওয়ার মতো ব্যাপার হল, শীর্ষ ১ শতাংশ বড়লোকের হাতেই কুক্ষিগত দেশের ৫১.৫৩ শতাংশ সম্পদ। তলার ৬০ শতাংশ মানুষের হাতে মাত্র ৪.৮ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ সালে জনসংখ্যার আর্থিক দিক থেকে এগিয়ে থাকা ১ শতাংশের সম্পদ বেড়েছে ৩৯ শতাংশ, আর তলার ৫০ শতাংশ মানুষের সম্পদ বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। বর্তমান ভারতে মোট বিলিওনিয়ারের সংখ্যা ১১৯। গত বছর থেকে দেশে ১৮ জন বিলিয়নিয়ার বেড়েছেন।
উল্লেখ্য, এই প্রথম দেশীয় বিলিওনিয়ারের মিলিত সম্পত্তির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের গণ্ডী (১ বিলিয়ন= ১০০ কোটি)। ২০১৮ সালে তাদের মিলিত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪০.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৩০,৮০৭ বিলিয়ন)। অক্সফামের রিপোর্ট বলছে, ভারতীয় বিলিওনিয়ারদের মিলিত সম্পদের পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাজেটেরও ঢের বেশি। ২০১৮-১৯ সালে পেশ করা বাজেট ছিল ২৪,৪২২ বিলিয়ন টাকার। গত ১২ মাসের মধ্যে ১১৯ জন ভারতীয় বিলিওনিয়ারের সম্পদ বেড়েছে ভারতীয় মুদ্রায় ৮০.২ বিলিয়ন (১১৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। যা ভারতের কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলোর প্রত্যক্ষ কর থেকে আদায় হওয়া রাজস্বের সমান।