দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা পর অযোধ্যা মামলার অবসান ঘটল আজ। দেশের শীর্ষ আদালতের রায়ে ওই জমিতে মন্দির তৈরি করা যাবে। মসজিদের জন্য আলাদা ৫ একর জমির কথা বলা হয়েছে। তবে এই মামলা একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা বহন করে। মামলার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জায়গা পেয়েছে, এই মামলায় রয়েছে বহু মোচড়, অনেক মোড়, উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যার জায়গা নিয়ে একাধিক সংগঠনের আদালতে আইনি লড়াই রয়েছে এই মামলাটিকে কেন্দ্র করে। ১৯৯২-এ পুরানো মসজিদটি ভেঙে দেন হিন্দু সংগঠনের কর্মীরা, তাঁদের বিশ্বাস ওই জায়গাটি ভগবান রামচন্দ্রের জন্মভূমি, দেশজুড়ে সেই হিংসায় প্রায় ২,০০০ জনের মৃত্যু হয়। প্রধানবিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে এই জমির ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ১৫২৮ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ তৈরি হয়। হিন্দু সংগঠনের দাবি, একটি মন্দির ধ্বংস করে তার জায়গায় মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছে। ১৮৫৩ সালে প্রথমবার এই জায়গাটিকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হিংসা হয়। ১৮৫৯ সালে ইংরেজ প্রশাসন ওই জায়গাটিতে হিন্দু এবং মুসলিমদের প্রার্থনা জন্য ফেন্স লাগিয়ে দেয়, প্রায় ৯০ বছর ধরে এটি ছিল। ১৯৪৯ সালে প্রথমবার জায়গাটিকে নিয়ে মামলা হয় মসজিদের পাশে ভগবান রামচন্দ্রের মূর্তি লাগানোর পর। তারপর ১৯৮৪ তে রামমন্দির নির্মাণের জন্য একটি কমিটি তৈরি করে হিন্দু সংগঠন। তিন বছর পর, পাঁচ দশক পর মসজিদের গেট খোলার নির্দেশ দেয় জেলা আদালত, এবং সেই নির্মাণের পাশে হিন্দুদের প্রার্থনার অনুমতি দেওয়া হয়। ১৯৮৯ সালে মন্দির নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় সেই নির্মাণ সংলগ্ন জায়গায়। ১৯৯০-এ তৎকালীন বিজেপি সভাপতি লালকৃষ্ণ আডবানি ওই জায়গায় রামমন্দির নির্মাণের জন্য সমর্থন চেয়ে দেশজুড়ে রথযাত্রা বের করেন। বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার অভিযোগ ওঠে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বিরুদ্ধে।
১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর, হিন্দু সংগঠনের কর্মীরা মসজিদটি ভেঙে দেন। দেশজুড়ে তৈরি হয় সাম্প্রদায়িক হিংসা। ধ্বংসের ১০দিন পর, লিবারহেন কমিশন তৈরি করা হয় ঘটনার তদন্তে। ২০০৯-এ কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়। তাতে নাম ছিল একে আডবানি, অটলবিহারী বাজপেয়ি এবং অন্যান্য বিজেপি নেতাদের, প্রায় ১৭ বছর পর শুরু হয় তদন্ত। ২০০৩ এর সেপ্টেম্বরে, একটি আদালত জানায় যে, সাতজন হিন্দু নেতা, তারমধ্যে কয়েকজন বিজেপি নেতা, বাবরি মসজিদ ধ্বংসে জন্য বিচারবিভাগের সামনে আসতে হবে। তবে তৎকালীন উপপ্রধানমন্ত্রী আডবানির বিরুদ্ধে কোনও চার্জ আনা হয়নি। এক বছর পর, উত্তরপ্রদেশের একটি আদালত জানায়, আদালতের দেওয়া ছাড় পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
বিজেপি নেতা মুরলি মনোহর জোশী এবং উমা ভারতী বিরুদ্ধে মামলার শুনানি শুরু করে লখনউ আদালত। জুনমাসে, মামলার শুনানি করা বিচারকদের মেয়াদ বাড়িয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। রায়দানের জন্য ৯ মাসের সময়সীমা দেওয়া হয়। ২০১১ এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বেশীদিন নয়, শীর্ষ আদালত জানায়, এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় আশ্চর্যজনক।
৪০দিন শুনানির পর, ১৬ অগস্ট দৈনিক শুনানি শেষ হয়। রায়দান স্থগিত করে দেওয়া হয় এবং ১৭ নভেম্বরের মধ্যে রায়দান হবে বলে জানানো হয়, সেদিন অবসর নেবেন প্রধানবিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তিনি পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের প্রধান। অবশেষে ইতিহাসের এই অধ্যায় পেরিয়ে পাঁচ বিচারপতির এই বেঞ্চ আজ এই ঐতিহাসিক মামলার রায় দেয়।