রাত থেকেই এক অসম্ভব শূন্যতা তৈরি হয়েছে ‘ভাল-বাসায়’। বারান্দা, ব্যালকনিতে থাকা গুল্মলতারাও ভাবছে, এতদিন যে আত্মীয়তার বাঁধনে গভীরভাবে বাঁধা ছিল, তা কোথাও আলগা হতে শুরু করেছে। কত মিনিট, কত সেকেন্ড তাঁর সেই স্পর্শ অনুভব হচ্ছে না…প্রতিদিনের থেকে আজ যেন একটু আলাদা। কারণ, ‘ভাল-বাসার’ ভালবাসার মানুষটি ‘শুভযাত্রার’ পথে রওনা দিয়েছেন। তাই এই মুহূর্তে অদ্ভুত সমাপতনে দাঁড়িয়ে নবনীতার ‘ভাল-বাসাটি।’
খানিকক্ষণ আগেই তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। চোখের জলে প্রিয় ‘নবনীতাদি’কে বিদায় দিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী থেকে অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা। এরপর সেখান থেকেই রাজ্য সরকারের উদ্যোগে প্রয়াত সাহিত্যিকের মরদেহ যাবে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অ্যাকাডেমির উদ্দেশে। মাকে শেষবার বিদায় জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তার ২ কন্যা, নন্দনা এবং অন্তরা।
রাতেই নবনীতা দেবসেনের মৃত্যুর খবর শুনে তাঁর হিন্দুস্তান পার্কের বাড়ির সামনে পৌঁছে গিয়েছিলেন অনুরাগীরা। প্রিয় লেখিকাকে শেষবারের মতো ক্ষণিক চাক্ষুষ করার জন্য অধীর আগ্রহে বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা। কিন্তু অনেককে ফিরতে হয়েছে ভগ্ন হৃদয়ে। কারণ, বাড়ির ভিতর ঢোকার অনুমতি পাননি কেউই। শোকসংবাদ পেয়েই টুইটে শোকবার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শ্রীকান্ত আচার্য, কবি শঙ্ঘ ঘোষ, অভিনেত্রী মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, লেখিকা তিলোত্তমা মজুমদার, লেখক শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বাংলা সাহিত্যজগতের বিশিষ্ট আরও অনেকেই শুক্রবার সকালে ‘ভালো-বাসা’য় গিয়েছিলেন সাহিত্যিকের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের উদ্দেশে। তাঁরা কথাও বলেন নবনীতার দুই মেয়ে অন্তরা এবং নন্দনা সেনের সঙ্গে।
নন্দনার কথায়, “গতকাল রাতে আমরা মা’কে একা পেতে চেয়েছিলাম। ওটা শুধু মায়ের আর আমাদের সময় ছিল।” বড় মেয়ে অন্তরা দেবসেন বলেন, “বাবার সঙ্গে নিয়মিত কথা হত মায়ের। যদিও গত কয়েকদিন কথা হয়নি। কারণ, মা একটু অসুস্থ ছিলেন। রাজ্য সরকারের তরফেই মায়ের মরদেহ বাংলা অ্যাকাডেমিতে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।” কেওড়াতলা শ্মশানে সম্পন্ন হবে শেষকৃত্য।
নবনীতার আকস্মিক প্রয়াণে গভীর শোকাহত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় জানান, “ নবনীতার চলে যাওয়াটা আমার কাছে ব্যক্তিগত ভাবে অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলা সাহিত্যের একটা অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। বাংলা সাহিত্যের বহু শাখায় তাঁর বিচরণ। এরকম আর পাওয়া যাবে না। কবিতা-গল্প-উপন্যাস-ভ্রমণ কাহিনী লিখেছে। ছোটদের জন্য রূপকথা রচনায় অসামান্য অবদান তাঁর। রূপকথা বেশি লেখেনি, অল্পই লিখেছে। কিন্তু যেটুকু লিখেছে তা চমৎকার”।