লোকসভা নির্বাচনের পরে হিড়িক উঠেছিল রাজনৈতিক দলবদলের। ভোটের ফল দেখে এবং গেরুয়া বাহিনীর হুমকির মুখে বহু নেতা-কর্মী-জনপ্রতিনিধিই যোগদান করেছিলেন বিজেপিতে। কিন্তু কিছুদিন গড়াতেই গেরুয়া সঙ্গ ত্যাগ করে নিজের নিজের পুরনো দলেই ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা। আর এর ফলস্বরূপ লোকসভা নির্বাচনের পর যে সমস্ত পুরসভাগুলি তাদের হাতছাড়া হয়েছিল, গত কয়েকদিনে ‘ঘর ওয়াপসি’র জেরে সেসব ফের তৃণমূলের হাতে এসেছে। যেমন নৈহাটি, হালিশহর, বনগাঁর পর গত শুক্রবার গারুলিয়া পুরসভাও পুনরুদ্ধার করেছে ঘাসফুল শিবির। হাতের মুঠোয় ভাটপাড়াও। যা দেখে ক্রমশই কপালের ভাঁজ চওড়া হচ্ছে বঙ্গ বিজেপির।
প্রসঙ্গত, ভিন দল থেকে বিজেপিতে আসা বিভিন্ন স্তরের নেতা-জনপ্রতিনিধিরাই এখন গেরুয়া শিবিরের ওপর ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে জানাচ্ছেন, তাঁদের যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না। দৈনন্দিন পার্টির কাজ, সংগঠনের কাজকর্ম-সহ বিভিন্ন বিষয় থেকে তাঁদের কার্যত দূরে রাখা হচ্ছে। আসলে বুথ, মণ্ডল কিংবা জেলা স্তরে নেতৃত্ব চয়নে দলের ‘আদি’ কর্মী-নেতাদের ওপরই ভরসা রাখছে বিজেপি। তৃণমূল-সিপিএম সহ বিভিন্ন দল থেকে আসা ‘নব্য’ প্রভাবশালীদের বিশ্বাস করতে পারছে না গেরুয়া শিবির। পদ্ম শিবিরের নেতৃত্বে বসিয়ে দেওয়ার পর ফের সংশ্লিষ্ট নব্যরা পুরনো দলে ফিরে যেতে পারে, এমন আশঙ্কাতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বঙ্গ বিজেপি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি দিল্লী থেকে জরুরি ফরমান এসেছে যে, সহমতের ভিত্তিতে দ্রুততার সঙ্গে দলের মণ্ডল সভাপতিদের নির্বাচন শেষ করতে হবে। তাই এই মুহূর্তে জেলায় জেলায় মণ্ডল সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছে জোর কদমে। যদিও মুখে সাংগঠনিক নির্বাচন বলা হলেও সহমতের ভিত্তিতে দলের সর্বস্তরে নেতৃত্ব চূড়ান্ত হবে মূলত সিলেকশন কিংবা বাছাইয়ের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে রাজ্যের কয়েকটি জেলায় বুথ এবং মণ্ডল স্তরে নেতৃত্ব বাছাইয়ে মতানৈক্য তৈরি হয়েছে। ফলশ্রুতিতে দলের কর্মী-নেতারা নিজেদের মধ্যেই ছোট-বড় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন।
শুধু তাই নয়। প্রতিদিনই রাজ্য এবং জেলা অফিসগুলিতে সম্ভাব্য মণ্ডল সভাপতিদের নামে গুচ্ছ গুচ্ছ নালিশ জমা করছে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী। যা নিয়ে একেই অস্বস্তিতে দল। তবে এরই মধ্যে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার সামিল, তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা একাধিক পুরসভার প্রতিনিধিদের মোহভঙ্গ হয়ে, পুরনো দলে ফিরে যাওয়া। কারণ এর জেরে সদ্য দখল করা একের পর এক পুরসভাও হাতছাড়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শাসকদলের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও বিজেপিতে যোগদানের পর ফের ভিন্ন সুর গাইতে শুরু করেছেন। সবমিলিয়ে, এই মুহূর্তে বেজায় আতঙ্কে ভুগছেন বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব।